ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী শ্লোক বা উক্তি by admin - September 26, 2020September 26, 20200 Share on Facebook Share Share on TwitterTweet Share on Pinterest Share Share on LinkedIn Share Share on Digg Share মহাভারতের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা আমরা অল্প বিস্তর সবাই জানি এবং পড়েছি। এই শ্রীকৃষ্ণ হলেন শ্রী বিষ্ণুর অষ্টম অবতার। তিনি হিন্দু সমাজে পূজিত হন। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে তাঁর জন্ম যেই দিনটি আজও প্রতি বছর জন্মাষ্টমী হিসাবে পূজিত হয়। শ্রীকৃষ্ণের পিতা বাসুদেব ও মাতা দেবকী, তিনি মথুরার রাজপরিবারের সন্তান। মামা কংস তাঁকে হত্যা করতে চাওয়ায়, তা থেকে রক্ষা করতে জন্মের দিন রাতে তাঁকে গোকুলে পালক পিতা নন্দ ও পালক মাতা যশোদার কাছে রেখে আসা হয়।মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পান্ডবদের পরামর্শ দাতা রূপে পান্ডবদের পক্ষে যোগ দেন। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের রথের সারথির ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুনকে বাঁচাতে মহান উপদেশ প্রদান করেন যা হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ “ভগবতগীতা” হিসাবে ধার্য করা হয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেই মহান উপদেশ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী হিসাবে গন্য করা হয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী দ্বারা মানুষ তার জীবনে সঠিক পথ খুঁজে পায়। এই বাণী ভুল পথ থেকে মানুষকে ঠিক পথে নিয়ে আসে। এই বাণী গুলির কিছু আজ ব্যখ্যার দ্বারা তুলে ধরা হল- ১)”ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে নীতির কথা আর রাগী মানুষের কাছে উচিত অনুচিত কথা অর্থ হীন”শ্রীকৃষ্ণ বেঁচে থাকতে মানুষের প্রয়োজন খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থান। এই মানুষ যখন খিদেতে ছটফট করে তখন তার জন্য নীতির কথার মূল্য ঠিক ততই থাকে না যতটা তার কাছে খাবারের মূল্য থাকে। শান্ত, ধীর স্বভাবের মানুষের যেমন উচিত অনুচিত বোধ থাকে তেমনি রাগী, বদ্-মেজাজী মানুষ ঠিক ততটাই অক্ষম নিজেকে সেই উচিত অনুচিত বোধকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। তাই, ক্ষুধার্ত আর রাগী উভয়েই নীতি বোধ এবং উচিত অনুচিত বোধ থেকে বঞ্চিত হয় এবং তা তাদের কাছে মূল্যহীন হয়ে ওঠে। ২)”ধর্ম,সততা,পরিচ্ছন্নতা, সহ্যশক্তি, ক্ষমতাশীলতা, আয়ু, শারীরিক ক্ষমতা এবং স্মৃতি শক্তি সবই কলিযুগে সময়ের সাথে সাথে হ্রাস পাবে।”শ্রীকৃষ্ণ সময় কারো জন্য দাড়িয়ে থাকে না। সময়ের সাথে অনেক কিছু বদলে যায়। দ্বাপর যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বাণী দ্বারা হিন্দু ধর্মের শেষ তথা কলিযুগের যে বর্ণনা ফুটে উঠেছে তা স্পষ্ট করে আমাদের শারীরিক এবং মানসিক ক্ষমতা হ্রাস পাবে সেই সঙ্গে স্মৃতিশক্তি, আয়ু ইত্যাদি অনেকাংশেই কমবে। এখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পাপের পরিমাণ পূর্ণের থেকে কম হওয়াকে সমস্ত কিছুর হেতু বলে চিহ্নিত করেছেন। যা জীবনধারণ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করবে। ৩) “জ্ঞানীর নিকট সত্যই পরম ধর্ম”শ্রীকৃষ্ণ আমরা তাই শুনি বা দেখি বা বুঝি যা আমাদের মন শুনতে, বুঝতে বা দেখতে চায়। সত্যিটা কী- তা খুব কম সংখ্যক মানুষের কাছে ধরা দেয়। তাই একটা জিনিসের ব্যখ্যা অনেক মানুষের কাছে অনেক রকম। যে শুধু সত্যি জানতে বা বুঝতে চায় ভগবান তাকেই প্রকৃত জ্ঞানী বলেছেন। সত্য অন্নেশন সবার দ্বারা হয় না। সেই ব্যক্তির কার্য সত্য তাই তার ধর্মও সত্য; কারণ, কার্যই প্রকৃত ধর্ম। ৪) “দূর্বল কেবল ভাগ্যকে দোষারোপ করে আর বীর ভাগ্যকে জয় করে”শ্রীকৃষ্ণ দূর্বল বা ভীরু প্রকৃতির মানুষ নিজের অক্ষমতাকে ঢাকতে পরিস্থিতি থেকে শুরু করে সমস্ত কাছের মানুষ, বন্ধু সবাইকে দোষারোপ করে। কিন্তু নিজেদের ভুলকে শুধরানোর কথা খণিকের জন্য মনে করেনা। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বাণী তাই যথার্থ সাহসী তথা বীরের কথা বলে যারা শুধুমাত্র জয়ের চিন্তা করে, তাদের ভুল শুধরাতে নিজের অপমান বোধ হয় না বরং তাতে তারা সঠিক শিক্ষা পাওয়ার আনন্দ খুঁজে পান। সেই সময়ের জন্য হেরে গেলেও বারবারের জন্য উঠে দাঁড়াতে শিখে যায়। ৫) “মাতৃঋণ কোনো সন্তানই কখনোই শোধ করতে পারে না।”শ্রীকৃষ্ণ “মা” হল পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ঠ উপহার একজন সন্তানের কাছে। কথিত,ভগবান সবার সাথে থাকতে পারে না বলেই তিনি মায়ের সৃষ্টি করেছেন। “মা” তাই ভগবানের রূপ প্রতিটি সন্তানের কাছে। এই মায়ের অবদান শোধ তাই দূরের কথা কোনো সন্তান কখনো পৌঁছাতে পারবে না কারণ এটি ভালোবাসা,যত্ন,আত্মত্যাগ, যা মাপার উর্ধ্বে। ৬) “সময় কখনও মানুষের নির্দেশিত পথে চলে না, মানুষকে সময়ের নির্দেশিত পথে চলতে হয়”শ্রীকৃষ্ণ সময় এবং বাক্ যা বেরিয়ে গেলে আর ফিরে আসে না। তাই এর যথার্থ ব্যবহার করতে না পারলে চরম বিপদের সম্মুখীন হতে হয় মানুষকে। সময়ের সাথে যারা চলতে পারে তারাই প্রকৃত অর্থে সফলতা অর্জন করে থাকে। মানুষ সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে কাজ না করলে পরে সেই কাজের জন্য যথেষ্ট সময় তো দূরের কথা আর সুযোগই পায়না। মানুষের তাই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করার কথা মাথায় রেখে সর্বদা সময় নষ্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে হবে।এবং সময়কে বুঝে চলতে হবে। ৭) “যখন সংসারে দেখার মতো কিছু থাকে না তখন মানুষ ঈশ্বরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।”শ্রীকৃষ্ণ মানুষ জীবনের চারটি অধ্যায়। এই চারটি অধ্যায়ের তিনটিতে মানুষ তার জীবনের যত দায়-দায়িত্ব পালন করে থাকে। শেষের দিকে যখন তার সব দাবি, দায়, দায়িত্ব, ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, কামনা, বাসনা শেষ হয়ে যায় তখন সে নিজে থেকেই নিজেকে পরিচালনা করে ঈশ্বরের নিকট। এই জগত সংসার তার জানা হয়ে যায় তাই আধ্যাত্মিক পথে নিজেকে পরিচালনার মাধ্যমে নিজের জীবনের শান্তি খুঁজে পায়। ৮) “দান তাকে বলে যাতে দানী হারায় আর যাচক প্রাপ্তি লাভ করে। কিন্তু বলিদান সেটাই যেটা দানী দেয় আর সারা জগত প্রাপ্ত করে।”শ্রীকৃষ্ণ দান এবং বলিদান এই দুই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী বরাবর গুরুত্বের দাবি রাখে। একজন মা বা শিক্ষক যে ছাত্র বা ছাত্রী তৈরী করেন তাতে তারা পরবর্তীকালে দেশের জন্য নিজেদের নিয়োগ করে যা সমগ্র দেশের প্রাপ্তি ঘটে। দেশ তথা দশের জন্য করা হল সার্বিক ভাবে উন্নতি করন। যা দানের অনেক ওপরে স্থান পায়। ৯) “যদি কোনো ঘটনায় মানুষ ভয়প্রাপ্ত তবে তার পরাজয়ই হয়। আর যে সব হারিয়ে শান্ত আর একাগ্র থাকে সেই আসল জয়ী”শ্রীকৃষ্ণ ভয় মানুষকে পিছনে ফেলে রেখে যায় তাই ভয় কোনো পরিস্থিতির ফলাফল হতে পারে না। মানুষের জীবন যাপন করতে নানা বাধার সম্মুখীন হবে কিন্তু নিজেকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে যাতে কোনো কিছু তাকে না নিজের পথ থেকে বিতাড়িত করতে পারে। তবেই প্রকৃত মানুষের অর্থে একজন ব্যক্তি পৌঁছে যেতে পারবে। ১০) “নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে কখনো সন্দেহ প্রকাশ করা সঠিক নয়”শ্রীকৃষ্ণ মানুষের প্রথম এবং প্রধান শত্রু হল তার নিজের সম্পর্কিত দূর্বলতা। যা আদতে তার নেই কিন্তু তার ভাবনা সেই দূর্বলতা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে আর তাকে সবার মাঝে হিনমন্নতায় ভুগতে বাধ্য করছে।তাই নিজের ক্ষমতার ওপর সর্বদা আস্থা রাখতে হবে এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বদ্ধ থাকতে হবে। আরও পড়ুন – জীবন নিয়ে উক্তি(Quotes About Life): সফল জীবনের চাবিকাঠি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী এই জগতের সকল কিছুর সাথে জড়িত ও এই জগত সংসারে যা কিছু তা ভগবান দ্বারা নির্দেশিত এবং পরিচালিত। নিজের ওপর আস্থা, বিশ্বাস রেখে এবং এই জাগতিক সুখের মোহো কাটিয়ে উঠতে পারলে অন্তরে শান্তি মিলবে। এই সমস্ত আজ এবং আগামী দিনেও স্বমহিমায় শ্রীকৃষ্ণের দূরদৃষ্টির সত্যতা নিশ্চিত করছে ও করবে। জানাতে ভুলবেন না কেমন হয়েছে।ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়। আশা করি, আগামী দিনে খুব শ্রীঘ্রই আপনাদের সামনে আরও নানান বিষয় নিয়ে আলোচনায় আসতে পারব। ধন্যবাদ।। Share on Facebook Share Share on TwitterTweet Share on Pinterest Share Share on LinkedIn Share Share on Digg Share