You are here
Home > Don't Miss > শ্লোক বা উক্তি > শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের অমৃত বাণী, ছবি, গান ও জীবনী

শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের অমৃত বাণী, ছবি, গান ও জীবনী

শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের অমৃত বাণী, ছবি, গান ও জীবনী

রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব, যিনি আজও বাঙালী তথা ভারতীয়দের মনে এক চিরস্মরনীয় নাম। যাঁর বাণী আমাদের ভাবধারাকে প্রভাবিত করে এবং বর্তমান সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শেখায়। যা বহু কাল আগে উচ্চরিত হলেও আজও সমাজে তার দৃষ্টান্ত লক্ষনীয়। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের বাণী সমাজে কারিগর তৈরি করতে শিখিয়েছে। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব তাঁর বাণীর মাধ‍্যমে চঞ্চল মনকে আধ্যাত্মিকতায় শান্ত করতে শিখিয়েছেন। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের বাণী মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ মোচন করে তাঁর দার্শনিক চিন্তাধারায় আমাদের প্রতিষ্টিত করতে শিখিয়েছেন। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের মহান দৃষ্টান্ত বাণী “টাকা মাটি,মাটি টাকা” বাস্তব জীবনে খুবই কার্যকরী ছিল আছে আর যত দিন এই পৃথিবী থাকবে আমরা থাকব এর গুরুত্বও থাকবে।

শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের জীবনী:

রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ই ফেব্রুয়ারি কামারপুর গ্রামের এক দরিদ্র বৈষ্ণব ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় এবং মাতা চন্দ্রমনিদেবী। তাঁর ভ্রাতা রামকুমার। তাঁর প্রকৃত নাম গদাধর চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু সবাই তাঁকে ভালোবেসে গোদাই বলে ডাকতেন। তিনি শৈশবকালেই তিনি রহস্যময় ও অলৌকিক শক্তির অভিজ্ঞতা অর্জন শুরু করেছিলেন। তরুণ গদাধর পড়তে ও লিখতে গ্রামের স্কুলে ভর্তি হয়েছিল তবে সে পড়াশুনো থেকে খেলতে পছন্দ করত। তিনি হিন্দু দেবদেবীদের মাটির প্রতিমা আঁকতে এবং বানাতে পছন্দ করতেন। তিনি তাঁর মায়ের কাছ থেকে শুনে আসা লোক ও পৌরাণিক কাহিনী দ্বারা আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তিনি রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ এবং অন্যান্য পবিত্র সাহিত্য পাঠ করেন। গদাধর প্রকৃতিকে এতটাই পছন্দ করতেন যে তিনি তাঁর বেশিরভাগ সময় উদ্যান এবং নদীর তীরে কাটাতেন। ১৮৪৩ সালে গদাধরের পিতার মৃত্যু হয়। পরবর্তীকালে পরিবারের সকল দায়িত্ব পড়ে তার বড় ভাই রামকুমারের উপর। পরিবারের উপার্জনের জন্য রামকুমার কলকাতায় ফিরে যান। তিনি রামকুমারের একজন সহকারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে পুরোহিত হয়েছিলেন। রামকুমারের মৃত্যুর পরে তিনি কালী ধর্মীয় মন্দিরে পুরোহিতের পদ গ্রহণ করেন। ১৮৫৯ সালে পঞ্চমবর্ষীয়া বালিকা সারদার সঙ্গে তার শাস্ত্রমতে বিবাহ সম্পন্ন হয়।শ্রীরামকৃষ্ণের বয়স তখন তেইশ। বয়সের এই পার্থক্য উনিশ শতকীয় গ্রামীণ বঙ্গসমাজে কোনও অপ্রচলিত দৃষ্টান্ত ছিল না। যাই হোক, ১৮৬০ সালের ডিসেম্বরে শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা দেবীকে ছেড়ে কলকাতায় ফিরে আসেন। ১৮৬৭ সালের মে মাসের আগে তাদের আর সাক্ষাৎ হয়নি। দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে পৌরোহিত্য গ্রহণের পর বঙ্গীয় তথা ভারতীয় শক্তিবাদের প্রভাবে তিনি কালীর আরাধনা শুরু করেন।

তার প্রথম গুরু তন্ত্র ও বৈষ্ণবীয় ভক্তিতত্ত্বজ্ঞা এক সাধিকা। রামকৃষ্ণ দেব নদিয়া এসেছিলেন এবং এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি দেখেছিলেন যে বৈষ্ণব ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা চৈতন্য মহাপ্রভু তার দেহে মিশ্রিত হয়েছিলেন। ১৮৬৪ সালে তোতাপুরী নামক জনৈক পরিব্রাজক বৈদান্তিক সন্ন্যাসীর কাছ থেকে রামকৃষ্ণ সন্ন্যাস গ্রহণ করেন।

পরবর্তীকালে অদ্বৈত বেদান্ত মতে সাধনা করে নির্বিকল্প সমাধি লাভ করেন রামকৃষ্ণ দেব। অন্যান্য ধর্মীয় মতে, বিশেষত ইসলাম ও খ্রিস্টীয় মতে সাধনা তাকে উপলব্ধির জগতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গিতে অশিক্ষিত হলেও রামকৃষ্ণ দেব বাঙালি বিদ্বজ্জন সমাজ ও শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের সম্ভ্রম অর্জনে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৮৭০-এর দশকের মধ্যভাগ থেকে পাশ্চাত্যশিক্ষায় শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের নিকট তিনি হয়ে ওঠেন হিন্দু পুনর্জাগরণের কেন্দ্রীয় চরিত্র।

শ্রীরামকৃষ্ণের অসংখ্য শিষ্যের মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দ শীর্ষস্থানীয়। যিনি বিশ্বমঞ্চে রামকৃষ্ণের দর্শন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ তার গুরু রামকৃষ্ণ দেবকে দর্শন করার জন্য ১৮৯৭ সালে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং সমাজের সেবায় প্রতিষ্ঠাকে নিবেদিত করেছিলেন। অন্যান্য শিষ্যরা যারা পারিবারিক জীবনের সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করেছিলেন এবং স্বামী বিবেকানন্দের সাথে রামকৃষ্ণ মঠ নির্মাণে অংশ নিয়েছিলেন তারা হলেন কালীপ্রসাদ চন্দ্র( স্বামী অভেদানন্দ), শশীভূষণ চক্রবর্তী (স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ), রাখালচন্দ্র ঘোষ (স্বামী ব্রহ্মানন্দ), শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী (স্বামী সারদানন্দ)। তারা সকলেই কেবল ভারতবর্ষ নয়, সারা বিশ্বজুড়ে শ্রী রামকৃষ্ণের শিক্ষার প্রচার এবং তাদের সেবার দৃষ্টিভঙ্গি আরও এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

রামকৃষ্ণের দেবেরঅন্যান্য বিখ্যাত শিষ্যদের মধ্যে রয়েছে মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, মহেন্দ্র লাল সরকার, অক্ষয় কুমার সেন।

রামকৃষ্ণ তার প্রত্যক্ষ শিষ্যদের পাশাপাশি প্রভাবশালী ব্রহ্মমোহন নেতা মিঃ কেশবচন্দ্র সেনের উপরও গভীর প্রভাব ফেলেছিলেন। রামকৃষ্ণের শিক্ষা এবং তার সংস্থা কেশবচন্দ্র সেনকে ব্রাহ্ম আদর্শের কঠোরতা প্রত্যাখ্যান করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি বহুবাদকে স্বীকৃতি দিয়ে ব্রাহ্মণ আদেশের মধ্যেই নব বিধান আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তিনি তার নব বিধান আমলে রামকৃষ্ণের শিক্ষার প্রচার করেছিলেন।

শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের ছবি:

রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের বাণী:

রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের বিখ্যাতবাণী “যত মত তত পথ’ আমাদের জীবনে চলার পথের পাথেয়। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের বাণী আমাদের আপ্লুত করে। তাঁর প্রতিটি বাণী আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের বাণী তাঁর সন্তানদের মন্ত্রমুগ্ধ করেন। তাঁর প্রতিটি বাণীর মধ্যে বাস্তব জীবনে কিভাবে পথ চলাতে হবে তার কথা বলা হয়েছে। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের বাণী যুক্তিতর্কের বাইরে গিয়েও যেকোনো পরিস্থিতিকে সামলানো যায়।

১.”ঈশ্বর সর্বদা সেই ব্যক্তিকে আশীর্বাদ করেন যে বিনা স্বার্থে অন্যের জন্য কাজ করে।”

শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

আপনি যদি কোনো কিছু পাওয়ার আশা না করে মানুষের পাশে থাকেন এবং মানুষের ভালো চান তাহলে আপনি ঈশ্বর লাভ করবেন। ঈশ্বর আপনার সর্বদা সহায় হবেন।

২.”তোমার আমার ধর্ম বলে যুদ্ধ করে কি লাভ? আমাদের গন্তব্য তো সেই একজনের কাছেই। “

শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

ধর্ম ধর্ম করে যে লড়াই, তার গন্তব্য ঐ এক অদ্বিতীয় অবিনশ্বর শক্তির কাছে যাকে আমরা কেউ চোখে দেখিনা শুধু মনের ক্যানভাসে একে তাঁর বন্দনা করি। তোমার মন্দিরে মসজিদে গির্জার নামানুসারে নিরপেক্ষ যখন তখন ধর্মযুদ্ধ করে কি লাভ। যখন এ জগতে সবই অদৃশ্য শক্তির আওতায়। সে তিনি গড বা আল্লা বা ভগবান যেই হন না কেন?

৩.”যতদিন তোমার মধ্যে কাম, ক্রোধ, মায়া, লোভের বন্ধন থাকবে, ততদিন তুমি ভগবানের আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত থাকবে। “

শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

তুমি যতক্ষণ না নিজস্ব শারীরিক বাসনা,মোহ,মায়া, বিরক্তি, ক্রোধ, লোভ
ত্যাগ করছ ততক্ষন পর্যন্ত তুমি ঈশ্বর লাভ করতে পারবে না। ঈশ্বরকে পেতে হলে এই সব কিছু থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে তাহলেই তুমি ইশ্বর লাভ করতে পারবে।

৪.”জ্ঞানের প্রকৃত অর্থ হলো লালসা ও লোভের বিভিন্ন বন্ধন থেকে মুক্তি। “

শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

জ্ঞান হলো মানুষের ব্রম্ভাস্ত্র। জ্ঞানের ফলেই আমরা নানা কিছু জানতে পারি। তুমি যত জ্ঞান লাভ করবে তত জ্ঞানের অধিকারী হবে। জ্ঞান বৃদ্ধির ফলে নিজস্ব শারীরিক বাসনা, লোভ পূর্ণতা পাবে না এবং জীবনে স্বনির্ভরশীল হবে। তোমার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে।

৫.”তোমার মনকে ভেদা ভেদ শূন্য বা খালি করতে শেখো তবেই তুমিও যে কোনো কাজের মধ্যেই ভক্তি রস খুজে পাবে।”

শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব

নিজের মনকে যতক্ষন না তুমি পরিষ্কার করছ ততক্ষন তুমি কিছুই করতে পারবে না। ভেদাভেদ ভুলে তুমি যদি কর্ম করো তাহলে তুমি সেই কর্মেই শৃঙ্গার রস খুঁজে পাবে।

৬. “জীবন বিশ্লেষণ করা বন্ধ করুন। এটা জীবনকে আরও জটিল করে তুলবে।”

শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব

আমাদের জীবনটা খুব ছোটো। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার যদি জীবনকে নিয়ে বিস্তার আলোচনা করি তাহলে সেই জীবন বিষয়টা খুব কঠিন হয়ে যায়। জীবনের চিন্তা না করে যদি আমরা নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করি তাহলে জীবনটা যে খুব কঠিন সেটা উপলব্ধি করতে পারবো না। ফলে জীবন আরো সুন্দর এবং সুষ্ঠভাবে কাটাতে পারব।

রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের গান:

ডুব-ডুব-ডুব রূপ সাগরে আমার মন,
তলাতল পাতাল খুঁজলে
পাবি রে প্রেম রত্ন ধন
ডুব-ডুব-ডুব রূপ সাগরে আমার মন,

রামকৃষ্ণদেবের প্রত্যেকটি গান মাকে উৎসর্গ করা। ভক্তিরসে তাঁর প্রত্যেকটি গানের মধ্যে মায়ের প্রতি ভালোবাসা শ্রদ্ধা গাপন করা আছে। রামকৃষ্ণ দেবের প্রতি মানুষের ভালবাসা তাদের গানের মাধ্যমেই প্রকাশ পায়। তাঁকে নিয়ে রচিত গানের মূল কথাই হল তাঁর জীবন দর্শন। তিনি যেভাবে এই জগতের আসল রূপ বর্ননা করেছেন তা পরর্বতী কালে যাঁরা তাঁকে নিয়ে গান রচনা করেছেন তার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে।

আরও পড়ুন – মোটিভেশনাল উক্তি বাংলা | অনুপ্রেরনামূলক উক্তি

শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের মহাপ্রয়াণ (রামকৃষ্ণ দেবের মৃত্যুর কারণ):

১৮৮৫ সালে আমাদের মহাপুরুষ রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের মৃত্যু হয়। জানা যায় যে, গলায় ক্যান্সার আক্রান্তের ফলে তাঁর মৃত্যু ঘটে। কলকাতার সেরা চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য তার শিষ্যগণ রামকৃষ্ণকে শ্যামপুকুরে এক ভক্তের বাড়িতে স্থানান্তরিত করেছিলেন। তবে সময়ের সাথে সাথে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে এবং কাশীপুরের এক বিরাট বাগানবাড়িতে স্থানান্তরিত করা হয়। তার অবস্থা দিনের পর দিন আরও অবনতি ঘটে। অবশেষে ১৮৮৬ সালে ১৬ আগস্ট কাশীপুরে বাগান বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সর্বশেষে বলা যায় যে, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের বাণী মানুষকে নুতন ভাবে বাঁচতে শেখায়। চিন্তাভাবনা মানসিকতা পরিবর্তন করে দেয়। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের বাণী বাস্তব জীবনে চলার মূলমন্ত্রী। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় অভিজ্ঞতা ও তাঁর সাধনা, বিশেষত তন্ত্র ও মধুর ভাব সাধনা বিশিষ্ট দার্শনিক তথা বিদ্বজ্জন কর্তৃক পর্যালোচিত হয়েছে। শ্রীরামকৃষ্ণের সমাধি, যা চিকিৎসাশাস্ত্রের লক্ষণ অনুসারে মৃত্যুবৎ, তাও বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক ও গবেষকের আলোচনার বিষয়বস্তু হয়েছে।

উৎস – ইন্টারনেট

এই পোস্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ!

Leave a Reply

Top
error: Content is protected !!