থাইরয়েড সমস্যা সমাধান: মেনে চলুন এই ৫টি উপদেশ শরীর ও স্বাস্থ্য by admin - September 19, 2020September 19, 20200 Share on Facebook Share Share on TwitterTweet Share on Pinterest Share Share on LinkedIn Share Share on Digg Share আজকাল রোগ আর বয়স দেখে আসে না। ৮ থেকে ৮০ প্রায় সকলেই প্রায় কম বেশী কোন না কোন রোগে আক্রান্ত হয়েই থাকে। যেমন বেশিক্ষন বসে থাকলে সারা শরীরে ব্যাথা করছে ? আপনার গলা হটাৎ ফুলতে শুরু করেছে ? আপনার সুন্দর চেহারা হঠাৎ ফুলে যাচ্ছে? আবার অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাচ্ছে কিংবা অবসাদের ঘেরাটোপে তলিয়ে যাচ্ছেন। তালে আপনি থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। কিন্তু তা বলে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। রোগ মানুষ মাত্রই হয়ে থাকে ঠিক তেমন ভাবে রোগ নির্মুলের পদ্ধতিও থেকে থাকে। আর এই থাইরয়েড রোগটিও এমন রোগ যা বয়স দেখে হয় না। এই রোগের জন্য অনেকেই খুব কড়া ধাঁচের মেডিসিন নিয়ে থাকে কিন্তু মেডিসিন ছাড়াও কিন্তু সাধারণ অনেক পদ্ধতিতেও থাইরয়েড সমস্যা সমাধান সম্ভব, চলুন তালে বিস্তারিত ভাবে জেনেনি কিভাবে সেটি সম্ভব। সকল রোগের সমাধান জানতে গেলে সর্বপ্রথমে তার উৎপত্তি, উপসর্গ সম্বদ্ধে জানতে হয় তারপর তো সমাধান। থাইরয়েড কিথাইরয়েড কি কারনে হয়থাইরয়েডের সমস্যা হলে কিভাবে বুঝবেনথাইরয়েড নিষিদ্ধ খাবারমেডিসিনের পাশাপাশি কিছু প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন থাইরয়েড কি? থাইরয়েডের উৎপত্তি হল আমাদের শরীরে স্বরযন্ত্রের দুপাশে থাকা একটি গ্রন্থিতে। দেখতে অনেকটা প্রজাপতির ন্যায়। এটি আমাদের শরীরের বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রন করে থাকে এবং অত্যাবশ্যকীয় হরমোন উৎপাদন করে থাকে। এই গ্রন্থিতে উৎপাদিত হরমোন নিঃসরণের উপর শারীরিক ও মানসিক গঠন বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। যেমন – বুদ্ধির বিকাশ ঘটানো, বাচ্চাদের স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠা, মহিলাদের ঋতুচক্র, গর্ভধারনে নিয়ন্ত্রণ করা প্রভৃতি। থাইরয়েড হরমোন মূলত দুই প্রকার – ১) টি- থ্রি , ২) টি- ফোর। আমাদের সকলের শরীরে নির্দিষ্ট মাত্রায় হরমোন থাকে । আর এই হরমোন বৃদ্ধি ও হ্রাস পাওয়ার ফলেই মানব শরীরে কঠিন সমস্যার উৎপত্তি ঘটে। তাই থাইরয়েড সমস্যা সমাধান অত্যন্ত জরুরি। থাইরয়েড কি কারনে হয়: বর্তমানে বেশীরভাগ মানুষ থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। কিন্তু কেন এই রোগটি মানুষের শরীরে বাসা বাধঁছে, কেন বৃহৎ সমস্যার তৈরি করছে তার কারন জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। থাইরয়েড সৃষ্টির কারন হল – শরীরে ব্যাপক আয়োডিনের ঘাটতি।অনেক সময় বিভিন্ন খাবারের অ্যালার্জি থেকে হতে পারে।আমাদের শরীরে সেলেনিয়ামের অভাবজনিত কারনে।কোন ভারী ধাতুর বিষক্রিয়া থেকে।শরীরে রেডিয়েশন থেরাপির খারাপ প্রভাবে।হরমোনের অসামঞ্জস্যতার কারণস্বরূপ।অটো ইমিউনি ডিসঅর্ডারের ফলে।থাইরয়েড অপরেশনের ফলে।লিথিয়াম, অ্যামিওডারোন জাতীয় কিছু ওষুধের পার্শ্বপতিক্রিয়ার ফলে।জন্মের সময় থাইরয়েড গ্রন্থি তৈরি না হলে।গ্রন্থিতে উৎসেচক ঠিকঠাক সচল না থাকলে।থাইরয়েডে টিউমার হলে।বিশেষ কিছু খাদ্য উপাদান বেশী মাত্রায় খেলে।থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে হরমোন নিঃসরণ কম বেশীর হলে। এই সকল কারনেই মানুষের শরীরে থাইরয়েড রোগের উৎপত্তি ঘটে। কিন্তু রোগকে কখনই গড়াতে দিতে নেই তাই থাইরয়েডের সমস্যা সমাধান অত্যন্ত আবশ্যকীয়। থাইরয়েডের সমস্যা হলে কিভাবে বুঝবেন: থাইরয়েড হরমোন কমে যাওয়ার কারনে সৃষ্টি হয় হাইপোথাইরয়েডিজম। তার ফলে যে সকল সমস্যা দেখা যায় – হটাৎ ওজন বৃদ্ধিদুর্বলতাচুল ঝরামুখ, পা ফুলে যেতে থাকাত্বক শুষ্ক হয়ে ওঠাস্মৃতিশক্তি লোভ পাওয়াবেশী করে ঠাণ্ডা লাগাপেশি এবং অস্থিসন্ধিতে ব্যাথা অনুভব করাক্লান্তি ও অবসাদ অনুভব করাকোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা (মহিলাদের ক্ষেত্রে) অনিয়মিত ও অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হওয়াঅসময়ে গর্ভপাত হয়ে যাওয়াগর্ভাবস্থায় বাচ্চার নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায় (শিশুদের ক্ষেত্রে) শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে বাধালেখাপড়া, বয়ঃসন্ধির ক্ষেত্রে সমস্যা অন্যদিকে থাইরয়েড হরমোন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সৃষ্টি হয় হাইপারথাইরয়েডিজম। হাইপারথাইরয়েডিজম হলে এই উপসর্গগুলি দেখা যায়- হটাৎ ওজন কমে যাওয়াশরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াবুক ধড়ফড় করে ওঠাপালস রেট বেড়ে যাওয়াঠিকমত ঘুম না হওয়াঅতিরিক্ত ঘাম হওয়াগরম সহ্য করতে না পারাহজমজনিত সমস্যাঅস্থিরতা অনুভব করাহটাৎ করে বিনা কারনে উদ্বেগ, দুশিন্তা হওয়াচুল পাতলা হয়ে যাওয়া, গোড়া আলগা হয়ে যাওয়াচামড়া পাতলা হয়ে যাওয়াহৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া। আরও পড়ুন – সুগারের লক্ষণ | সুগার কন্ট্রোল করার উপায় | ডায়াবেটিস কমানোর উপায় এই সকল লক্ষন দেখা দিলে বুঝতে হবে আপনি থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। তাই যত তাড়াতাড়ি থাইরয়েড সমস্যা সমাধান সম্ভব তত তাড়াতাড়ি শরীর সুস্থ হয়ে ওঠাও সম্ভব। থাইরয়েড নিষিদ্ধ খাবার: থাইরয়েড সমস্যা সমাধান এর জন্য কিছু কিছু খাবারকে আপনার জীবন থেকে পুরোপুরিভাবে বহিষ্কার করতে হবে। আপনার প্রানের থেকে প্রিয় খাবারকে চিরতরে ভুলে যেতে হবে। যেমন সোয়াবিন ও তোফু – এইধরনের খাবারে আইসোফ্ল্যাভিন থাকে যা থাইরয়েড রোগীদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ফুলকপি বা ব্রকোলি – এই সব্জি হতেই পারে আপনার খুব প্রিয় এবং এগুলি শরীরের জন্য খুব উপকারী কিন্তু থাইরয়েড রোগীর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উল্টো কারন এর মধ্যে থাকা ফাইবার ও অন্যান্য নিউট্রিশন থাইরয়েড হরমোনের ক্ষতিসাধন করে। মিষ্টি – থাইরয়েড আমাদের শরীরে মেটাবলিজমকে ধীর করে দেয় এর ফলে স্থূলতা দেখা যায় এর মিষ্টি খেলে আরও বাড়তি ক্যালোরি ঢুকে ক্ষতি করে। পাউরুটি, পাস্তা, ভাত – অ্যাকাডেমি অফ নিউট্রিশন এন্ড ডায়েটেটিক্সে’র বিশে বিশেষজ্ঞ রুথ ফ্রেচম্যানের মতে থাইরয়েড রোগীদের এই ধরনের গ্লুটেন জাতীয় খাদ্য এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। কারন এই গ্লুটেন জাতীয় প্রোটিন ক্ষুদ্রান্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। ফাস্ট ফুড ও তৈলাক্ত খাদ্য – এই সকল খাবার শরীরের হরমোনকে রিপ্লেসমেন্ট মেডিসিনের অ্যাবসর্ভে বাধাঁ প্রদান করে। ফ্রোজেন ফুড – এই সকল খাবার মানেই প্রোসেসিং মাধ্যমে প্রিজারভেটিভ করে রাখা, যা সোডিয়ামের জন্ম দেয়। এরাই সোডিয়াম থাইরয়েডের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। অ্যালকোহল – অ্যালকোহল থাইরয়েড রোগীদের শরীরের জন্য এক প্রকার বিষের সমান। এটি থাইরয়েড হরমোনের সামঞ্জস্যকে নষ্ট করে দেয়। কফি – কফিতে ক্যাফেইন থাকে যা থাইরয়েড রিপ্লেসমেন্ট হরমোন মেডিসিনের কাজে বাধাঁ সৃষ্টি করে। এছাড়া থাইরয়েড সমস্যা সমাধান এর জন্য যে সকল খাবারগুলি অতি অবশ্যক সেগুলি হল – ডিম খাওয়া অত্যন্ত জরুরি, যে কোন ছোট মাছ যেমন স্যামন মাছ খাওয়া খুব ভালো, দই কারন এতে ভিটামিন ডি থাকে এটি থাইরয়েডের বৃদ্ধি ও হ্রাসকে নিয়ন্ত্রন করে, ক্যাপসিকাম, কাজুবাদাম, বিন্স, মেথি শাক, নারকেল বা নারকেলের দুধ, কার্বোহাইড্রেট জাতীয় ব্রাউন রাইস, কপার ও আয়োডিন যুক্ত খাবার, শিমের বীজ, প্রচুর ফল ইত্যাদি। মেডিসিনের পাশাপাশি কিছু প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন: ১) ভিটামিন এ গ্রহন করা – থাইরয়েড সমস্যা সমাধান এর জন্য ভিটামিন এ খুবই কার্যকরী। যেমন – গাজর, হলুদ , সবুজ শাকসবজি, ডিম এগুলো রোগীর শরীরে ভিটামিন তৈরি করতে সাহায্য করে। ২) নারকেল তেল – নারকেল তেলে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা রোগীর শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। রান্নার জন্য এক্সট্রা ভার্জিন অর্গানিক নারকেল তেল ব্যবহার করা উচিৎ। দুধের সাথে ২ চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে খাওয়া থাইরয়েড রোগীর জন্য খুবই উপকারজনিত। ৩) আদা – আদাতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার জিংক, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম যা থাইরয়েডের অবস্থা ভালো রাখতে সাহায্য করে, চা এর সাথে মিশিয়ে কিংবা কাঁচা খাওয়া খুব উপকারি ৪) তিসিবীজ – তিসিবীজ আঁশ সমৃদ্ধ উচ্চমানের খাদ্য। এটি থাইরয়েডের জন্য ওষুধের সমান কাজ করে। যাদের হরমোন নিঃসরণ কমজনিত সমস্যা আছে তাঁদের ক্ষেত্রে এই তিসিবীজ অত্যন্ত উপকারী। তিসিবীজ গুড়ো করে পানীয় কিংবা খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া উচিৎ। ৫) আপেল সাইডার ভিনেগার – আপেল সাইডার ভিনেগার থাইরয়েড সমস্যায় অত্যন্ত কার্যকরী। এটি অ্যাসিড ও ক্ষারের ভারসম্যকে বজায় রাখে। শরীরের অতিরিক্ত ওজনের ঘাটতি করে, শরীরের বিষ মুক্ত করে। উষ্ণ গরম জলে ২চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে মধু দিয়ে খেলে ভালো উপকার হয়। ৬) ভিটামিন ডি – এই ধরনের রোগের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি খুব উপকারী। ৭) আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার – পেঁয়াজ, ভুট্টা, আনারস, রসূন, বাঁধাকপি এই ধরনের খাবারে আয়োডিন থাকে যা থাইরয়েড রোগীদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ৮) জল – কথাতেই আছে জলের অপর নাম জীবন। তাই পর্যাপ্ত জল পান করা অত্যন্ত জরুরি। জল রক্ত চলাচলকে সচল রাখে, হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আরও পড়ুন – এই সহজ পদ্ধতিতে মাত্র এক মাসেই কমান শরীরের অতিরিক্ত মেদ | Reduce Extra Body Fat In A Month এই সকল বিষয়গুলি অবলম্বন করে চললে আপনার শরীরের থাইরয়েড জনিত সকল সমস্যা স্থিতিশীল থাকবে। কারন রোগ বাড়তে দেওয়ার আগে যত সম্ভব তাকে নির্মূল করার দিকে লক্ষ্য থাকা উচিৎ। Share on Facebook Share Share on TwitterTweet Share on Pinterest Share Share on LinkedIn Share Share on Digg Share