ডায়াবেটিস সারানোর উপায় | সুগারের লক্ষণ | সুগার কন্ট্রোল করার উপায় শরীর ও স্বাস্থ্য by admin - August 16, 2020October 3, 20203 Share on Facebook Share Share on TwitterTweet Share on Pinterest Share Share on LinkedIn Share Share on Digg Share বর্তমানে ডায়াবেটিস বা সুগার শব্দটি আমাদের সবার কাছে খুবই পরিচিত। পারিপার্শ্বিক পরিবেশে বা প্রায় প্রতিটি পরিবারেই ডায়াবেটিসে ভুক্তভোগী মানুষের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়।ডায়াবেটিসের কারণে পক্ষাঘাত, চক্ষুসমস্যা, হৃদরোগ, পচনশীল চর্মরোগ, পুরুষের যৌন অক্ষমতা এমনকি মহিলাদের ক্ষেত্রে মৃত শিশুর জন্ম দেওয়া, বেশি ওজনের শিশু জন্ম দেওয়া, অকাল সন্তান প্রসব এরকম বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। এই ডায়াবেটিস সারানোর উপায় কি?! আমাদের আজকের বিষয় ডায়াবেটিস, আসুন দেখে নিন – ডায়াবেটিস কি?ডায়াবেটিস কেন হয়?ডায়াবেটিসের(সুগারের) লক্ষণ কি?ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয়।ডায়াবেটিসের টাইপ (প্রকারভেদ) ডায়াবেটিস কি? আমাদের শরীরে ইনসুলিন নামক হরমোনের ঘাটতির কারণে বিপাকজনিত সমস্যার সৃষ্টি হলে সাধারণত রক্তে গ্লুকোজ(সুগার) বা শর্করার পরিমাণ বেশি হয়ে যায়। আর রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করার পরিমাণ বেশি হয়ে গেলেই তখন শরীর আর তা যথাযথ ব্যবহার করতে পারে না ফলে দেখা দেয় ডায়াবেটিস মেলিটাস এর মত স্বাস্থ্যসমস্যা। ডায়াবেটিস কেন হয়? কেউ ডায়াবেটিস আক্রান্ত বেশ কিছু কারণে হতে পারে – বিশেষ করে পিতা মাতা বা পরিবারের কেউ বা রক্তসম্পর্কিত কারোর যদি থাকে।কারোর ওজন বেশি থাকলে।কারোর যদি উচ্চ রক্তচাপ বা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে।এছাড়া ও জেনেটিক কোনো কারণে ইনসুলিন যদি কমে যায়।অন্যান্য হরমোন ঘটিত কারণে।স্টেরওয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের কারণে। ডায়াবেটিসের(সুগারের) লক্ষণ কি? ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়- ঘন ঘন প্রস্রাব করতে যাওয়াঅতিরিক্ত ক্ষুধা পাওয়াওজন কমে যাওয়াদূর্বলতা অনুভব করাদৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়াক্ষত জায়গা শুকাতে বিলম্ব হওয়াবিভিন্ন চর্মরোগ দেখা দেওয়া ডায়াবেটিসের(সুগারের) লক্ষণ কি আশা করি সেটা আপনাদের কাছে স্পষ্ট। ডায়াবেটিসের(সুগারের) লক্ষণ গুলি দেখলে শীঘ্রই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয়: সাধারণত একজন সুস্থ লোকের রক্তের প্লাজমায় গ্লুকোজের মাত্রা খাবার আগে ৫.৬ মিলি মোলের কম বা খাবার ২ ঘন্টা পর ৭.৮ মিলি মোলের কম থাকে। কিন্তু কোনো ব্যক্তির যদি রক্তের প্লাজমায় গ্লুকোজের মাত্রা খাবার আগে ৭.১ মিলি মোলের বেশি থাকে বা খাবার ২ ঘন্টা পর ১১.১ মিলি মোলের বেশি থাকে। তবে ঐ ব্যক্তি ডায়াবেটিস আক্রান্ত গণ্য হবে। ডায়াবেটিসের টাইপ (প্রকারভেদ): সাধারণত বিভিন্ন কারণে, বিভিন্ন টাইপের ডায়াবেটিস হয়- টাইপ ১ ডায়াবেটিস: যাদের শরীর থেকে ইনসুলিন তৈরী হয় না একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় তারা টাইপ ১ ডায়াবেটিসের রোগী। এদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন বাইরে থেকে দিতে হয়। এবং শৈশব থেকেই এরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে। টাইপ ২ ডায়াবেটিস: যে সব শরীরে ইনসুলিন তৈরী হয় তবে তার পরিমাণ সামান্য, তারা টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগী। মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি বিশেষ করে ৪০ বছর বয়সের পর থেকে এটি দেখা যেতে পারে। প্রেগনেন্সিকালীন ডায়াবেটিস: অনেক সময় গর্ভাবস্থায় ও ডায়াবেটিস আক্রান্ত হন অনেকেই। যা পরে সন্তান প্রসবের পর চলে ও যায়। কিন্তু এই গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর দুজনের বিপদ এড়াতে ইনসুলিন দেওয়া হয়। আরও পড়ুন – এই সহজ পদ্ধতিতে মাত্র এক মাসেই কমান শরীরের অতিরিক্ত মেদ | Reduce Extra Body Fat In A Month রক্তে সুগার বেড়ে যাওয়া ডায়াবেটিস মেলিটাসের মূল লক্ষণ। কোন ব্যাক্তির রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় এমনকি কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গিয়ে হার্ট অ্যাট্যাক বা স্ট্রোক ও হতে পারে। আজকের আলোচনায় আমরা বিশদে দেখে নেবো:- রক্তে সুগার-বৃদ্ধির কারণরক্তে সুগার-বৃদ্ধি জনিত সমস্যাসুগার(ডায়াবেটিস) কন্ট্রোল করার বা কমানোর(সারানোর) উপায়সুগার(ডায়াবেটিস) রোগীর খাদ্য তালিকাসুগার কমাতে ব্যায়াম রক্তে সুগার-বৃদ্ধির কারণ: আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় যদি পাওরুটি, ভাত, আলু বা চিনি ও মিষ্টির মত অতিরিক্ত শর্করা যুক্ত খাবার থাকে তাহলে রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত স্ট্রেস বা মানসিক চাপে ও রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। রক্তে সুগার-বৃদ্ধি জনিত সমস্যা: ১. অনেক সময়ই কারো কারো অতিরিক্ত পিপাসা দেখা দেয়। এই অতিরিক্ত জল পানের ফলে বারবার প্রস্রাব করতে যেতে ও হয়। ফলে শরীরের রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং মাথাব্যথা, বমি, অবসন্নতার মত বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয় যা রক্তে সুগার-বৃদ্ধি জনিত সমস্যার ফলেই ঘটে। ২. চোখে ঝাপসা দেখা রক্তে সুগার-বৃদ্ধি জনিত সমস্যার ফলে হতে পারে। এমনকি চোখে ছানি ও পড়তে পারে রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে গেলে। ৩. রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে গেলে অবসন্নতা দেখা দেয় এবং ক্লান্ত লাগে। ৪. মাথাব্যথা রক্তে সুগার-বৃদ্ধি জনিত সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। ৫. রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিডনির উপর চাপ পড়ে ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা হয়। সুগার(ডায়াবেটিস) কন্ট্রোল করার বা কমানোর(সারানোর) উপায়: রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া কন্ট্রোল করা যায় বেশ কিছু উপায়ে- ইনসুলিন ব্যবহার: একটি সুস্থ-স্বাভাবিক শরীর রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রনে যথাযথ ইনসুলিন তৈরী করতে পারে। তবে ডায়াবেটিস আক্রান্ত শরীর যথাযথ ইনসুলিন তৈরী করতে পারে না। ফলে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে বাইরে থেকে ইনসুলিন ব্যবহার করা হয়। কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স জনিত খাবার: রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রনের আরেকটি উপায় হল কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স জনিত খাবার খাওয়া।যার ফলে রক্তের সুগার রোলার ওঠানামা বন্ধ হয এছাড়াও সুগার(ডায়াবেটিস) কন্ট্রোল করার বা কমানোর(সারানোর) উপায় গুলির মধ্যে অন্যতম হল খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও শরীর চর্চা করা। সুগার(ডায়াবেটিস) রোগীর খাদ্য তালিকা: আমাদের দৈনন্দিন লাইফ স্টাইলকে একটু ব্যালেন্স করলে সুগার কন্ট্রোলকরা যায় অতি সহজেই। যেমন- খাদ্য তালিকা মেনটেন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপায়, রক্তে সুগারের পরিমাণ কন্ট্রোল করার জন্য। সুগার(ডায়াবেটিস) রোগীর খাদ্য তালিকা এমন হওয়া উচিত: চিনি বা মিষ্টি পরিত্যাগ করতে হবে।কার্বহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার না খাওয়াক্যালোরিযুক্ত খাবার পরিমাণ মত খাওয়া।নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া অনিয়ম না করা।অভুক্ত না থাকা অল্প অল্প করে বারবার খাওয়া।তেতো জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া।সাদা আটা বা ময়দার রুটির পরিবর্তে ভুসিযুক্ত লাল আটা খেতে হবে।ফাস্টফুড পরিত্যাগ করতে হবে।ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে। প্রতিদিনসময়করণীয়সকাল ২ দিন খালি পেটে৬-৭টারাতে (১চামচ জিরা) ভেজানো ১গ্লাস জল৪ দিন খালি পেটে সকালে৬-৭টাঅ্যালভেরার জুস২ ঘন্টা গ্যাপ একটু পর৯ টাগ্রীন টি, ক্রীমক্রেকার বিস্কুটবেলায়১১ টারুটি সব্জি, ডিম সিদ্ধ ও ফলদুপুর২ টাভাত, মুসুর ডাল/সোয়াবিন/রাজমা,মাছ/ডিম/মাংস ও সবুজ শাক সবজি।সন্ধ্যা৫-৬টাগ্রীন টি, মুড়ি/বিস্কুটরাতে৯-১০টাভাত/রুটি, সবজি, মাছ বা ডিমসুগার(ডায়াবেটিস) কন্ট্রোল করার বা কমানোর(সারানোর) উপায় গুলির মধ্যে অন্যতম হল খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ সুগার কমাতে ব্যায়াম: যে কোনও রোগকে কন্ট্রোলে রাখতে ব্যায়াম বা শরীরচর্চা খুবই কার্যকরী উপায়। সুগার রোগীর ক্ষেত্রে ও সুগার নিয়ন্ত্রণে ব্যায়াম বা শরীর চর্চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে প্রতিদিন যদি নিয়ম করে একটু হাঁটা যায় রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয় এবং তাতে শরীর যথেষ্ট অ্যাক্টিভ ও সুস্থ থাকে। ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয় এবং পুরোপুরি নির্মূল হয় না। তবে চিকিৎসকদের মতানুযায়ী ওষুধ, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণে কিছুটা কন্ট্রোলে রাখা যায়। সুগার ধরা পড়লে অনেকেই টেনশনে পড়ে যায়। টেনশন না করে করণীয় হল- যে ব্যক্তি সুগার আক্রান্ত হয়েছেন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মেডিসিন নিয়মিত খেয়ে যান।যাদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন নিতে হয়, তাদের তা খেয়াল রাখতে হবে যাতে বাদ না যায়।পরিমাণ মতো ঘুম দরকার। উদ্বিগ্ন না হয়ে শান্ত থাকুন, ঘুমান।এছাড়া, ৬ মাস অন্তর সুগার চেক করে দেখে নিতে হবে।ডাক্তারের পরামর্শ মতো সব টেস্টগুলো ও করে নিতে হবে। আরও পড়ুন – ঘরোয়া উপায়ে চুলের যত্ন নিন | Best Hair Care Tips সুতরাং ডায়াবেটিস বা রক্তে সুগার বেড়ে যাওয়া নিয়ে অযথা টেনশন না, উপরোক্ত আলোচনা অনুযায়ী চলুন।সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং রোগ মুক্ত থাকুন। শরীর ও স্বাস্থ্যবিষয়ক আরও তথ্যাদি জানতে আমাদের সাথে থাকুন। [বিভিন্ন তথ্য সংগৃহীত ও চিকিৎসকদের মতামত] Share on Facebook Share Share on TwitterTweet Share on Pinterest Share Share on LinkedIn Share Share on Digg Share