তুলসী পাতার উপকারিতা: জেনে নিন তুলসী পাতা থেকে কী কী রোগ সেরে যায় শরীর ও স্বাস্থ্য by admin - November 25, 2020March 28, 20230 Share on Facebook Share Share on TwitterTweet Share on Pinterest Share Share on LinkedIn Share Share on Digg Share ভারতীয় শাস্ত্রে তুলসী অতি পবিত্র উদ্ভিদ হিসাবে সমাদৃত। আমাদের ভিন্ন পুরানে তুলসী কখন দেবী রূপে কখনো বা বিষ্ণু তথা হরির অংশ রূপে পূজিত হয়ে থাকেন। তুলসী কথার অর্থ হল যার তুলনা নেই। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও তুলসীর সমাদর কম নয়। তুলসী এমন একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার পাতা, ফুল, ফল, কান্ড, মূল সবই উপকারি। ছেলেবেলায় ঠাকুমা দিদিমা র কাছে আমরা শুনেছি বাড়িতে তুলসী গাছ থাকা ও নিয়মিত তুলসী পাতা খাওয়ার অভ্যাস থাকা মানে রোগভোগ থেকে মুক্ত থাকা। পরে বুঝেছি এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান যা ক্যান্সার, ডায়বেটিস বা হৃদরোগের মত নানা মারণাত্মক রোগের বিরুধ্যে শক্তিশালী রূপে লড়াই করতে তুলসী পাতার উপকারিতা-র জুরি মেলা ভার। তুলসী পাতায় এতখানি ঔষধিক গুণ রয়েছে যে স্বয়ং এই পাতাকেই একটি ওষুধ বলে গণ্য করা হয়। তুলসীর এত গুনাগুনের কারণে এখন বিভিন্ন স্থানে বানিজ্যিক ভাবে তুলসী পাতা চাষ করা হয়ে থাকে। আসুন এবার তাহলে দেখে নেওয়া যাক তুলনা হীন তুলসী পাতার উপকারিতা: Table of Contents সর্দি-কাশি কমাতে:রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে:হার্টের ও ডাইবেটিসের সমস্যায় তুলসী পাতার উপকারিতা:চোখের সমস্যায়:দাঁতের সমস্যায় তুলসী পাতার উপকারিতা:ক্যান্সার প্রতিরোধে তুলসী পাতা:পেটের সমস্যা, কিডনির সমস্যা ও ত্বকের সমস্যায় তুলসী পাতার উপকারিতা: সর্দি-কাশি কমাতে: সামান্য তাপমাত্রার হেরফের ঘটলে চট করে সর্দি-কাশি লেগে যায়। এর চিকিৎসায় তুলসী পাতার ব্যবহার আদি অনন্তকাল থেকে হয়ে আসছে।তুলসী পাতাকে গরম জলে ভালো করে ফুটিয়ে তার নির্যাস বার করে মধুর সহিত সেবন করলে খুবই উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়াও তুলসী পাতা আদা ও চা পাতা একত্রে ফুটিয়ে লেবু ও মধু সহযোগে সেবন করলে বিশেষ করে কাশি ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।তবে তুলসী পাতা ও বাসক পাতা একত্রে ব্যবহার করলে সর্দি কাশি র পাশাপাশি বুকে জমে থাকা কফ নির্গত করতে সহায়তা করে। গরম জলে নুন ও তুলসী পাতা দিয়ে গার্গল করলে গলা ব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে: তুলসী পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিজেন পদার্থ বর্তমান থাকার রক্ত অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফুসফুস ও এস্থেমা র সমস্যা র তুলসী পাতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।তুলসী পাতা ও এলাচ ভালো করে জলে ফুটিয়ে সেই জল পান করলে খুব সহজেই নানারকমের রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও তুলসী পাতা অ্যান্টি সেপ্টিক ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজে লাগানো হয়ে থাকে। ক্ষত স্থানে তুলসী পাতা বেটে তার প্রলেপ লাগলে ক্ষত স্থান তারাতারি শুকিয়ে যায়। তুলসী পাতা দিয়ে ফোটানো জল দিয়ে ক্ষত স্থান পরিষ্কার করলে তা অ্যান্টিসেপটিক এর কাজ করে। হার্টের ও ডাইবেটিসের সমস্যায় তুলসী পাতার উপকারিতা: বর্তমানে ব্যস্ত পৃথিবীতে হার্টের সমস্যা ও ডাইবেটিসের সমস্যা ঘরে ঘরে।হার্টের সমস্যা সঙ্গে সঙ্গী হয় উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল আর হাইপার টেনসন। তুলসী পাতার মধ্যে যেহেতু অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি ফলে রক্ত চলাচল সচল রাখতে সহায়তা করে। রক্ত কে জমাট বাঁধা তে দেয় না। শরীরে গুড কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে ব্যাড কোলেস্টেরল এর মাত্রা হ্রাস ও ফ্যাট কমাতে তুলসী পাতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা ও কমিয়ে দেয়। ডায়বেটিসে ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রে তুলসী পাতা ইন্সুলিন উৎপাদনের কাজ করে। প্রতিদিন খাওয়ার আগে তুলসী পাতা খাওয়ার অভ্যেস করলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। চোখের সমস্যায়: ঠান্ডা বা গরমে ঘোরার সময় অনেক সময় চোখ লাল হয়ে যায়। কড় কড় করে, জল পড়ে, পিচুটি কাটে, আলো সহ্য হয় না। একটি আবার সংক্রমক। বাড়িতে একজনের হলে অন্যের চোখে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তুলসীতে থাকা এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদানগুলি চোখের এই যাবতীয় সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।তুলসী পাতা র রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে চোখে র উপর লাগালে উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়াও দীর্ঘ ক্ষন কম্পিউটার, টিভি বা মোবাইল ফোনে র দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখে ক্লান্তি অনুভব হয় তখন তুলসী পাতার রস ঠান্ডা করে টিস্যু পেপারে ভিজিয়ে চোখের উপর দিয়ে রাখলে আরাম পাওয়া যায়। এমনকি, ছানির সমস্যা বা দৃষ্টিশক্তির সমস্যা তেও তুলসী পাতা খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। দাঁতের সমস্যায় তুলসী পাতার উপকারিতা: বর্তমান কাল বিভিন্ন নামি দামী টুথপেস্ট ও মাউথওয়াশ এ তুলসী পাতার ব্যবহার লক্ষনীয়।কারণ এতে রয়েছে এন্টি ব্যাক্টিরিয়াল উপাদান । এছাড়াও, রয়েছে এন্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান যা দাঁত কে কোনো সমস্যা যেকোন সমস্যা থেকে মুক্ত করতে পারে।মাড়ির সমস্যা ও মুখের দুর্গন্ধ, দাঁতে ব্যাথা প্রভৃতি সমস্যায় কষ্ট পাচ্ছেন সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে থাকা তুলসী পাতা ও গোল মরিচ মিশিয়ে জারক তৈরি করে যন্ত্রনা স্থানে লাগিয়ে দিন দেখবেন নিমিষেই ব্যথা থেকে মুক্তি ঘটবে। ক্যান্সার প্রতিরোধে তুলসী পাতা: ক্যান্সার প্রতিরোধে তুলসী পাতার উপকারিতা খুবই চমকপ্রদ।তুলসী পাতায় উপস্থিত রেডিওপ্রটেকটিভ উপাদান যা টিউমারের কোষগুলিকে মেরে ফেলতে সহায়তা করে।এছাড়াও বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেছে তুলসী পাতায় থাকা ফ্যাইটোকেমিক্যাল যেমন রোসমারেনিক অ্যাসিড, মাইরেটিনাল, লিউটিউলিন এবং এপিজেনিন ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম।তুলসী পাতা ব্রেস্ট ক্যান্সার, অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার প্রভৃতি রোধ করতে সহায়তা করে। পেটের সমস্যা, কিডনির সমস্যা ও ত্বকের সমস্যায় তুলসী পাতার উপকারিতা: পেটের যেকোন সমস্যা পেটে ব্যাথা থেকে শুরু করে গ্যাস, অম্বল, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সবকিছুর বিরুদ্ধে তুলসী পাতা দারুণ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় বারে বার প্রমাণিত হয়েছে যে তুলসী পাতায় উপস্থিত হেপাটোপ্রটেকটিভ উপাদান যা লিভার সুস্থ ও সচল রাখতে সহায়তা করে। লিভার বিষক্রিয়া করণ রোধ করতে তুলসী পাতা বেশ উপকারী। এছাড়াও আনসার ও পেটের বিভিন্ন ক্রণিক সমস্যায় তুলসী পাতার জুরি মেলা ভার।তুলসী পাতায় থাকা বিভিন্ন উপাদান কিডনি স্টোন রোধে সহায়তা করে।এছাড়াও ত্বকের সমস্যায় তুলসী পাতা কে ধন্বন্তরী বলা হয় থাকে। এতে উপস্থিত অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের বিভিন্ন রকম সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ব্রন ,র্যাস, ত্বকের বিভিন্ন সংক্রমণ এর বিরুদ্ধে কার্যকারি ভূমিকা পালন করে। আরও পড়ুন – আদার উপকারিতা: জেনেনিন রান্নাঘরের অতি প্রয়োজনীয় মশলা আদার গুনাগুণ বহু গুনে মন্ডিত তুলসী তাই প্রত্যেক ভারতীয় ঘরে বিরাজমান।কিন্তু বর্তমানে পরিবর্তনের যুগে ফ্ল্যাট সিস্টেমের বাড়িতে তুলসী গাছ বসানোর প্রচলন হ্রাস পেলেও, তুলসী পাতার চাহিদা কিন্তু তুঙ্গে। তাই বাড়িতে এই তুলসী অবশ্যই রাখুন আর প্রত্যেক দিন খান এবং উপকার পান। ভেষজ কেন্দ্রীয় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আজ আপনাদের সামনে পেশ করলাম। আশা করি সবাই উপকার পাবেন। অবশ্যই জানান কমেন্টে কেমন লাগল। ধন্যবাদ।। Share on Facebook Share Share on TwitterTweet Share on Pinterest Share Share on LinkedIn Share Share on Digg Share