মা তারা ও সিদ্ধপীঠ তারাপীঠ মন্দির: বাঁধা বিঘ্ন ও দুঃখ বিমোচনে তারা মা রাশিফল ও ভবিষ্যৎ by admin - June 12, 2020June 12, 20200 Share on Facebook Share Share on TwitterTweet Share on Pinterest Share Share on LinkedIn Share Share on Digg Share পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার রামপুরহাট এলাকায় অবস্থিত একটি প্রাচীন তান্ত্রিক সিদ্ধপীঠ ও একান্ন সতীপীঠের অন্যতম হল তারাপীঠ মন্দির! এই তারাপীঠ মন্দিরে অধিষ্ঠাত্রী দেবী হল দশমহাবিদ্যার দ্বিতীয় মহাবিদ্যা মা তারা। শক্তিপীঠ তারাপীঠে মা তারা শিলারুপে প্রতিষ্ঠিত। তন্ত্র সাধনার ক্ষেত্র হিসাবে এবং মন্দিরের আরাধ্য দেবী মা তারার বন্দনায় প্রচুর ভক্তদের সমাবেশ ঘটে এই তারাপীঠে। সাধক বামাখ্যাপা এই তারাপীঠ মন্দিরের নিকটবর্তী শশ্মানে তন্ত্র সাধনা করতেন। তাই প্রতি অমবস্যা, পূর্ণিমাতে অসংখ্য ভক্তমন্ডলীর ভিড়ে তারাপীঠ মন্দিরের মা তারা ও শশ্মান হয়ে উঠেছে বিখ্যাত ও জনপ্রিয়। আমাদের জীবনের সকল বাঁধা বিঘ্ন ও অশুভকে নাশ করে মা তারা। মায়ের আশীর্বাদে প্রত্যেকের জীবন হয়ে ওঠে মঙ্গলময় ও শুভময়। আসুন আজ আমরা দেখে নিই কালীকথা মা তারার মঙ্গলময়ী মূর্তি ও শক্তি প্রদায়িনী রুপ: হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে দশমহাবিদ্যা দেবীর ভয়ঙ্কর উগ্র রুপ ও মোহময়ী মঙ্গলময়ী রুপের প্রতীকি হল- কালী, তারা, ষোড়শী, ভৈরবী, ভূবনেশ্বরী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী ও কমলাকামিনী। আর এই হিন্দু ধর্মের আরাধ্য দেবী মা কালীরই এক বিশেষ রুপ মা তারা। সাধক বামাখ্যাপা মা তারার একনিষ্ঠ সাধনা করে মায়ের পরম ভক্ত হয়ে ওঠে এবং তারামায়ের পরম প্রিয় সন্তান হয়ে ওঠে। ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত তারাপীঠে মা তারার শিলারুপ আচ্ছাদনে ঢাকা। বাইরের ঐ আচ্ছাদনই মাতৃরুপে পূজিত হয়। মা তারা কখনো দূর্গতিনাশিনী মা দূর্গা কখনো মা অন্নপূর্ণা রূপে আবির্ভূত হন আবার কখনো তিনিই বিপত্তারিণী মা তারা। বহু দূর দূরান্ত থেকে প্রচুর ভক্তরা নিজেদের মনসকামনা পূরণ করার প্রার্থনা নিয়ে মায়ের দরবারে এসে হাজির হয়। শুক্লা চতুর্দশীতে মায়ের আবির্ভাব দিবস : গর্ভগৃহের বাইরে মা তারাকৌশিকী অমবস্যায় মা তারাপয়লা বৈশাখে তারাপীঠ মন্দিরে ভক্তদের ভিড়জীবনের সমস্ত দুঃখ দুর্দশায় : বিপত্তারিণী মা তারাসন্তানের বিপদে শক্তিপ্রদায়িনী : মায়ের আশীর্বাদমা তারার প্রণাম মন্ত্রতারা মায়ের গানতারাপীঠের সন্ধ্যা আরতিমা তারার গায়ত্রী মন্ত্র শুক্লা চতুর্দশীতে মায়ের আবির্ভাব দিবস (গর্ভগৃহের বাইরে মা তারা): প্রতিদিন তারা মায়ের অন্নভোগ দেওয়া হয়। তবে একমাত্র শুক্লা চতুর্দশীতে তারা মায়ের আবির্ভাব দিবসে লুচি ভোগ দিয়ে এবং গর্ভগৃহের বাইরে পশ্চিম মুখে বসিয়ে মা পূজিত হন। কথিত আছে, বীরভূমের মলুটি গ্রামে বোন মৌলিক্ষার মন্দিরের দিকে মুখ করে বসিয়ে মায়ের আরাধনা হয় এই শুক্লা চতুর্দশীতে। ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত তাই এই শুক্লা চতুর্দশীতে তারা মায়ের আবির্ভাব দিবসে বহু পূর্ণার্থীর ভিড় হয় এছাড়া শারদীয়ার শেষ লগ্নে মায়ের কাছে বিজয়া ও সারেন ভক্তরা। কৌশিকী অমবস্যায় মা তারা: কথিত আছে, ভাদ্র মাসের কৌশিকী অমবস্যায় কুশ এর আসনে বসে মায়ের সাধনা করে বামাখ্যাপা তারা মায়ের দেখা পান এবং ঐদিন তারাপীঠ মহাশশ্মানে তন্ত্র সিদ্ধি লাভ ও করেন বামাখ্যাপা। তাই, এই কৌশিকী অমবস্যায় তারাপীঠ মন্দির প্রাঙ্গণে ও মহাশশ্মানে তন্ত্র সাধনার উদ্দেশ্যে বহু তান্ত্রিক হোম যজ্ঞ ও সাধনা করেন এবং হাজার হাজার ভক্তদের ভিড় জমে ওঠে বিশেষ মনোস্কামনা পূরণের উদ্দেশ্যে। ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত কৌশিকী অমবস্যায় মা কে ‘রাজকীয় ভোগ’ নিবেদন করা হয়। সকালে পোলাও, খিচুড়ি, পাঁচরকম ভাজা, রুই কাতলা মাছ সহ চাটনি, পায়েস ও পাঁচরকম মিষ্টির নৈবেদ্য এবং সন্ধ্যাতে খিচুড়ি ও পাঁচরকম ভাজা ও বিভিন্ন তরকারি দিয়ে মাকে ভোগ নিবেদন করা হয় এই কৌশিকী অমবস্যায়। পয়লা বৈশাখে তারাপীঠ মন্দিরে ভক্তদের ভিড়: বাঙালিরা বাংলা নববর্ষের সূচনাতে তারাপীঠে পয়লা বৈশাখে অনেকেই তারা মায়ের কাছে পূজা দিয়ে বছর শুরু করেন। আবার অনেক ব্যবসায়ী ও হালখাতার খাতা মায়ের চরণে স্পর্শ করিয়ে সারাবছর যাতে শুভ যায়, মাকে পূজা নিবেদনের ভিড় লাগিয়ে দেয় তারাপীঠ মন্দিরে। জীবনের সমস্ত দুঃখ দুর্দশায় বিপত্তারিণী মা তারা: মায়ার এই দুনিয়ায় সবকিছুই মোহ মায়া ক্ষণিকের, আত্মীয় স্বজন, বাবা-মা, ভাই-বোন কেউই যখন সাথ দেয় না মা তখন পাশে থাকেন। জীবনের সমস্ত দুঃখ দুর্দশায়, বিপদে মা ভক্তদের সাহায্য করে, সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা করে। অমবস্যা পূর্ণিমা ছাড়া ও প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবার মায়ের পূজা করলে মা তারা খুশি হন। সন্তানের বিপদে শক্তিপ্রদায়িনী মায়ের আশীর্বাদ: শক্তিপ্রদায়িনী মা তারা তিনিই জগতের সমস্ত শক্তির উৎস। সন্তানের সমস্ত বিপদ মায়ের আশীর্বাদে দূর হয়ে যায়। মায়ের তুমুল শক্তি সব বাঁধা বিপত্তি দূর করে দেয়। জীবনের কাছে হেরে যাওয়া পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে নতুন করে জেতার শক্তি এবং নতুন জীবন শুরু করার শক্তির ও জোগান দেয় মায়ের আশীর্বাদ। মা তারার প্রণাম মন্ত্র: মায়ের কাছে সন্তানের আকুতি ও প্রার্থনা জানাতে বিশেষ কোনো মন্ত্রের প্রয়োজন হয় না। ভক্তিভরে মাকে ডাকলেই মা তারা সন্তানের ডাকে সাড়া দেন। তবে হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে পূজা অর্চনাতে পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারণ ধ্বনিত হয়। সেই সাথে আরাধ্য দেব-দেবীর অঞ্জলিতে ও মন্ত্রো উচ্চারণের রীতি আছে। আমরা পুরোহিতের অনুস্মরণে সেই মন্ত্র উচ্চারণ করি। মা তারার ও এমনই কিছু প্রণাম মন্ত্র উল্লেখিত রয়েছেহিন্দু ধর্মশাস্ত্রে। মন্দিরের পুরোহিতরা সেই মন্ত্র উচ্চারণ করে মায়ের পূজা অর্ঘ্য নিবেদন করে। মা তারার গান: সাধক বামাখ্যাপা গান গেয়ে মায়ের পূজা করতো। নিজের সারাজীবন মায়ের চরণে উৎসর্গ করে, গান গেয়ে মায়ের কাছে পূজা নিবেদন করে ও মা তারার সাধনা করে পাগল সন্ন্যাসী হয়ে ওঠে বামাখ্যাপা। হিন্দুশাস্ত্রে শাক্তপদাবলীতে শাক্তগীতি প্রাচীন কাল থেকেই গীত হতো। রামপ্রসাদের বহু শ্যামা সঙ্গীতের নিদর্শন আমরা পেয়েছি। পরবর্তীকালে বহু শিল্পী প্রচুর ভক্তিরসে শ্যামা সঙ্গীত এবং তারা মায়ের গান গেয়েছেন। যে সব ভক্তিমূলক গান শুনে ভক্তিতে ভরে ওঠে মন। এমনই কিছু উল্লেখযোগ্য মা তারার গান হল- তারা নামে এতো মধুদিবা নিশি তারা নামতারা নামের ভেলায়তারা তারা বল মনজয় তারা জয় কালীতারা মায়ের নাম ভজোতারাপীঠে যাবো আমিতারাপীঠে শশ্মানে মাতারা মায়ের লীলামা তোর কোলের ছেলে মা তারার ছবি: বহুরূপে আবির্ভূতা মা তারা। মায়ের দূর্গতিনাশিনী রূপ, জগৎজননী রূপ, বিপত্তারিণী রূপ, কোমলেকামিনী রূপ বা মমতাময়ী রূপ কিংবা শক্তিপ্রদায়িনী রূপের বহু ছবি আমরা তারাপীঠ মন্দির সংলগ্নে পেয়ে যাবো। যে ছবি গৃহে রাখলে মায়ের অসীম কৃপা লাভ করা যায়। ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত তারা মায়ের বই: মা তারার মহিমা ও সমস্ত লীলাকাহিনী নিয়ে অনেকেই বই লিখেছেন। তবে তারাপীঠ মন্দিরের সেবাইত প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তারা মায়ের ও তারাপীঠ মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে অনেক বই লিখেছেন। প্রবোধবাবু রচিত বই থেকে জানা যায়- ১২২৫ বঙ্গাব্দে মল্লারপুরের জমিদার জগন্নাথ রায়ের মন্দিরে তারা মায়ের পূজা হত। কালের গতানুগতিক ধারায় সেই মন্দিরের ভগ্নাংশটুকু রয়ে যায়। পরে ঐ ভগ্নাংশ মন্দির সংস্করণ করে বর্তমান তারাপীঠ মন্দিরের নির্মাণ হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন টেরাকোটার কাজ – রামায়ণ, মহাভারত, মা দূর্গার দশভূজা মূর্তি ও মহিষাসুর মর্দিনী খোদিত হয়েছে মায়ের মন্দিরে। এছাড়া, তারাপীঠ মন্দির চত্বরে তারা মায়ের অনেক বই পাওয়া যায়। তারাপীঠের সন্ধ্যা আরতি: মায়ের আরতি সব ভক্তের কাছে প্রিয়। বিশেষ করে তারাপীঠ মন্দিরে তারা মায়ের সন্ধ্যাআরতী তো অনির্বচনীয়। দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসে মায়ের সন্ধ্যাআরতী দেখতে এবং মাকে দর্শন করতে। মাকে দর্শন করতে এসে মায়ের সন্ধ্যাআরতী না দেখা হলে অনেক ভক্তের মন আফশোসে ভরে ওঠে। তাই মায়ের সন্ধ্যাআরতী দেখার জন্য সবাই ব্যাকুল হয়ে থাকে। বিশেষ করে কৌশিকী অমবস্যায় মায়ের আরতি দেখতে প্রচুর ভক্তদের সমাগম ঘটে। সন্ধ্যাআরতীর সময় মায়ের রাঙাচরণ এবং পদ্ম, নীল অপরাজিতা ও জবাফুলে সজ্জিত তারা মায়ের অপরূপ সৌন্দর্য্য ভক্তদের মনকে ভরিয়ে তোলে। তারই সাথে মন্দিরের পুরোহিতদের মন্ত্র পাঠ, ধূপ ও নানা বাদ্য যন্ত্রের আওয়াজে মুগ্ধ হয়ে ওঠে সবার মন এবং অনুভূত হয় গোটা তারাপীঠ মন্দির প্রাঙ্গণ জুড়ে যেন মায়েরই বিরাজ। সমস্ত ভক্তমন্ডলী অনাবিল ভক্তিতে মায়ের এই সন্ধ্যাআরতী দর্শন করে। এবং নিজেদের সকল মনসকামনা মা কে প্রার্থনা করে। মা তারা গায়ত্রী মন্ত্র: বেদের অন্যান্য মন্ত্রের মতো গায়ত্রী মন্ত্র ও বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ঋকবেদ যুগে প্রকৃতি উপাসনার একটি অন্যতম গায়ত্রী মন্ত্র। বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত গায়ত্রী মন্ত্র দ্বারা বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা ও হতো। হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে বিভিন্ন আরাধ্য দেব-দেবী উৎসর্গীকৃত গায়ত্রী মন্ত্র উল্লেখিত রয়েছে। এরই মধ্যে মা তারা গায়ত্রী মন্ত্র বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মা তারা গায়ত্রী মন্ত্র – গাতারায়ৈ বিদ্মহে মহোগ্রাহ্যৈ ধীমহি । তন্নো দেবী প্রচোদয়াৎ। এই গায়ত্রী মন্ত্র উচ্চারণে জীবনের সব বাঁধা বিপত্তি দূর হয়ে , মনের সমস্ত অজ্ঞতা কেটে গিয়ে-উন্মুক্ত মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশুদ্ধ চিন্তার উদ্ভব ঘটে। আরও পড়ুন – সৌভাগ্যবতী নারী চিনুন শরীরের এই বিশেষ অঙ্গগুলি দেখে মা তারাকে ভক্তিভরে ????ডাকলে সন্তানের বিপদে কষ্টে না সাড়া দিয়ে থাকতে পারে না মোমতাময়ী মা তারা। জীবনের সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে মায়ের আশীর্বাদী হাত মাথায় থাকলে। মা তারার মঙ্গলময়ী মূর্তি ও শক্তি প্রদায়িনী রুপ আমাদের জীবনকে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ও শান্তিতে ভরিয়ে দেয় এবং সমস্ত সমস্যার মোকাবিলা করার শক্তি ও জোগায়। মায়ের আশীর্বাদী হাত আপনাদের সকলের উপরে থাকুক এই ????আমাদের কাম্য। এমনই ভক্তিমূলক আলোচনা বিশদে জানতে আমাদের সাথে থাকুন। কেমন লাগলো?? আমাদের আজকের আলোচনা কালীকথায় মা তারা.. জানাতে ভুলবেন না। Share on Facebook Share Share on TwitterTweet Share on Pinterest Share Share on LinkedIn Share Share on Digg Share