রসগোল্লা বানানোর রেসিপি/পদ্ধতি! মিষ্টি খেতে কে না ভালোবাসে আবার সেটা যদি হয় রসগোল্লা তালে তো আর কথাই নেই। বাঙ্গালীর হাজারো ঐতিহ্যের মধ্যে অন্যতম হল রসগোল্লা। মিষ্টিপ্রেমী বাঙ্গালীর রসগোল্লা ছাড়া ভাতের শেষ পাত একদম অসম্পূর্ণ । রসগোল্লার জন্ম এই বাংলায় নবীন চন্দ্র দাসের হাত ধরে। রসগোল্লা কাদের ঐতিহ্য তা নিয়ে চলছিল বাংলা বনাম ওড়িশার লড়াই। কিন্তু অবশেষে ২০১৭ সালে ঐতিহ্যের লড়াইয়ে জয়ের শিরোপা ছিনিয়ে নেয় বাংলা। আর শুধু আজ থেক নয় ১৮৬৮ সাল থেকেই রসগোল্লা কিন্তু সবার প্রিয়।
তাই আজ আমরা আপনাদের কাছে নিয়ে এসেছি আপনার আমার সকলের প্রিয় রসগোল্লা রেসিপি (রসগোল্লা বানানোর পদ্ধতি)।
তো চলুন আর দেরি না, এই পোস্ট থেকে শিখে নেওয়া যাক রসগোল্লা বানানোর পদ্ধতি(রসগোল্লা রেসিপি)।
রসগোল্লা বানানোর রেসিপি/পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ, শুধু এর জন্য একটু সময়, ধৈর্য্য লাগবে আর বেসিক কতগুলি ধাপ মেনে চলতে হবে, আর অবশ্যই উপকরনের পরিমান সঠিক রাখতে হবে, কারন মনে রাখবেন পরিমানের উপর নির্ভর করেই কিন্তু একদম দোকানে বানানো রসগোল্লার স্বাদ পাবেন।
আমি এখানে ১০ জন খেতে পারে সেই হিসেবে আয়োজন করেছি।
আগেই বলেছিলাম যে রসগোল্লা বানানোর রেসিপির জন্য মূল কিছু ধাপ মেনে চলতে হব। এখন আমরা সেই ধাপসমূহ নিয়ে আলোচনা করবো।
১)প্রথমে একটি পাত্রে ক্রিমযুক্ত দুধ নিন। তারপর গ্যাস অন করে পাত্রটি গ্যাসের উপর রাখুন। এরপর ১০মিনিট ধরে দুধটি জ্বাল দিন। এবার ভালো ভাবে দুধ ফুটে উঠলে ২ চামচ পাতিলেবুর রস তার মধ্যে দিয়ে দিন। তারপর একটি চামচ দিয়ে ধীরে ধীরে নাড়ুন যতক্ষন না অবধি ছানা না কাটে।
২)ছানা আর জল আলাদা হয়ে এলে নাড়ানো বন্ধ করে গ্যাস অফ করে দিন। এরপর প্রায় ১০মিনিট ঠাণ্ডা হতে সময় দিন।
৩) এবার পাতলা সুতির কাপড়ের মধ্যে ছানাটা নিয়ে জল থেকে আলাদা করে নিন, মাঝে একবার ছানাটা থান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন যাতে লেবুর রসের গন্ধ না থাকে। এরপর হাত দিয়ে আস্তে চিপে চিপে ছানার ভিতরে থাকা সমস্ত জল বের করে নিতে হবে। কারন জল থাকলে কিন্তু রসগোল্লা ভেঙে যেতে পারে।
৪)ছানার জল ছাঁকার সময় কোনভাবে জোরে প্রেসার দাওয়া যাবে না এতে ছানার ভিতরের মশ্রারাইজার চলে যায় ফলে মিষ্টি শক্ত হয়ে যেতে পারে। এরপর ছানা সমেত কাপড়টি বেঁধে ৪০ মিনিট ঝুলিয়ে রাখুন।
৫) ৪০ মিনিট হয়ে গেলে ছানাটা নামিয়ে একটি বড় প্লেইন পাত্রের মধ্যে রাখুন , তারপর তার মধ্যে ৩ চামচ ময়দা ও গুড়ো চিনি দিয়ে ভালো করে হাতের তালু দিয়ে নিচ থেকে উপরের দিকে ঘষুন যতক্ষন না অবধি ছানাটা মসৃণ না হচ্ছে। খেয়াল রাখতে হবে ছানার মধ্যে যেন কোন দলা না থাকে।
৬) ছানা মসৃণ হয়ে গেছে রসগোল্লার আকারের ন্যায় গোল গোল করে গড়ে দিন।
৭) প্রথমে একটি পাত্রে ৩ কাপ চিনি নিয়ে নিন। (এখানে বলে রাখি অনেকেই কম মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন কিন্তু রসগোল্লার আসল স্বাদ পেতে গেলে মিস্টি একটু বেশী লাগে)। এরপর ৮ কাপ জল দিয়ে দিন চিনির মধ্যে ( শিরা বেশী ঘন না হয় তার জন্য জল বেশী নিতে হয়, কারণ ছানাতে কোন স্বাদ থাকে না শিরার মাধ্যমেই রসগোল্লা মিষ্টি হয়)। ২ টুকরো এলাচ হালকা থেঁতো করে শিরার মধ্যে দিয়ে দিন এতে সুন্দর গন্ধ আসবে মিষ্টি থেকে। এরপর গ্যাস অন করে ১০ মিনিট মতো নিভু আঁচে ফোটান । ১০ মিনিট হয়ে গেলে হাতে নিয়ে শিরার ঘনত্ব দেখে নিন।
৮) শিরা ফোটার সময় আগে তৈরি করে রাখা ছানার বলগুলি তার মধ্যে দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ঢেকে রেখে দিন। বলগুলি দেওয়ার পর কোনভাবে নাড়ানো যাবে না। ১৫ মিনিট হয়ে গেলে গ্যাস অফ করে আরও ১০ মিনিট ঢাকা দিয়ে রেখে দিন যাতে রসগোল্লার মধ্যে রসগুলো ঢুকতে পারে।
৯) রসগোল্লা সম্পূর্ণ তৈরি হয়েছে কিনা বুঝতে একটি বাটিতে নর্মাল জল দিয়ে তার মধ্যে একটি রসগোল্লা দিয়ে দিন, যদি রসগোল্লাটি জলের মধ্যে ডুবে যায় তো বুঝবেন আপনার সম্পূর্ণ রসগোল্লা তৈরি।
১০) এবার হয় গরম গরম রসগোল্লা উপভোগ করুন বা ২ ঘণ্টা রেখে ঠাণ্ডা করে উপভোগ করুন আপনার পছন্দের রসগোল্লা।
দোকানের ন্যায় মিষ্টির স্বাদ পেতে মনে রাখতে বিশেষ কিছু উপকরনের বিষয়।
আমরা অনেকেই রসগোল্লা তৈরির জন্য নর্মাল গরুর দুধ ব্যবহার করি। কিন্তু সব সময় ক্রিমযুক্ত দুধ ব্যবহার করা উচিত । কারণ ক্রিম দুধের স্বাদ অন্যন্য দুধের থেকে সম্পুর্ণ আলাদা আর একটু তৈলাক্ত হয় । এতে এক্সটা ফ্যাট থাকে। আর এই দুধ ব্যবহারে রসগোল্লা নরম হয়, খেতেও বেশ লোভনীয় হয়।
এলাচ চিনির শিরায় দিলে আর গন্ধটাই লাজাবাব হয়। এলাচের মধ্যে যে এরোমা থাকে তা মিষ্টির মধ্যে অতুলনীয়ভাবে অন্য ধরনের আমেজ সৃষ্টি করে। কিন্তু এক্ষেত্রে ভুলেও বড় এলাচ ব্যবহার করবেন না। মিষ্টির ক্ষেত্রে সর্বদা ছোট এলাচ প্রযোজ্য।
চিনি দুই রকমের হয় বড় দানার চিনি ও ছোট দানার চিনি। কিন্তু এক্ষেত্রে ছোট দানার চিনি ব্যবহার করা হয়। কারন ছোট দানার চিনি সহজেই গলে যায়, জল বেশী ফোটাতে হয় না এর হলে শিরার পরিমান ঠিক থাকে। কিন্তু বড় দানা ব্যবহার করলে সময় বেশী লাগে উপরিউন্তু প্রয়োজনে আরও জল দিতে হয়।
যে কোন মিষ্টির দোকানে খেয়াল করলে দেখবেন তারা ছানা মাখার জন্য কাঠের পাটাতন ব্যবহার করে থাকে। কারন এতে ছানা মাখা ভালো হয়, কোন দলা ভাব থাকে না। কিন্তু বাড়িতে কাঠের পাটাতন না থাকলে বিকল্প হিসেবে কাঠের পাটাতন ব্যবহার করতে পারেন।
সবথকে ভালো স্পঞ্জের রসগোল্লা বানাতে গেলে যে সকল বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে।
রসগোল্লা আসল দিক হল রসগোল্লা তৈরির জন্য বল সঠিকভাবে গড়তে হবে। আর জন্য যখন ছানা মাখা হবে সেটা যেন খুব মসৃণ হয়। তার মধ্যে কোনভাবে দলা না থাকে। তাই গুঁড়ো দুধ ও ময়দা দেওয়ার সময় চালনি দিয়ে ভালো ভাবে চেলে নেবেন।
শিরার মিশ্রণের ঘনত্ব খুব জরুরি রসগোল্লা তৈরির ক্ষেত্রে। কারন ঘনত্ব বেশী হলে রস ঢুকবে না মিষ্টির মধ্যে উল্টে বেশী আঠালো হয়ে যাবে যার ফলে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে দানা পাকিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে, এক্ষেত্রে সেটি দানাদার মতো দেখতে হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন – ডালগোনা কফি বানানোর পদ্ধতি: বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন নিমেষে
এবার তো জেনে নিলেন রসগোল্লা বানানোর রেসিপি/পদ্ধতি । মাত্র ৪ ঘণ্টায় কিভাবে তৈরি হয়ে যাবে আপনার মনের মতো মিষ্টি। তাই আর দেরি না করে ঝটপট একবার ট্রাই করে ফেলুন যাতে বাড়িতে কোন অথিতি আশার কথা থাকলে শেষ পাত হোক কিংবা শুরু, কিনে আনা বাইরের মিষ্টির দোকানের রসগোল্লা আর খাওয়াতে না হয়। তাঁদের আপনার নিজের হাতে তৈরি রসগোল্লা খাওয়ার সুযোগ করে দিন। সবাইকে আনন্দ দিন, আর নিজেও উপভোগ করুন ।
সকালবেলা আমরা যে উদ্দমের সাথে দিন শুরু করি যে এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আমরা সারাদিন আমাদের…
স্বপ্ন যা আমাদের বাঁচাতে অনুপ্রাণিত করে, স্বপ্ন পূরণ এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যার জন্য লড়াই করতে থাকি…
সকালের ক্লান্ত আভায় ভেসে রাতের অন্ধকারে শান্তি খুঁজে পাই। সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে চাঁদ মামার…
আমরা সকলেই স্মার্ট যুগে নানান গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে গুড মর্নিং বা সুপ্রভাত বা শুভ সকাল…
আমাদের জীবনে চলার পথে নানা বিষয় আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হয় ভালো মন্দ মিশিয়ে। মানুষের ব্রম্ভাস্থ…
বিবাহ খুব পবিত্র শব্দ যা শত যুগ ধরে দুটি মানুষের সারাজীবনের বন্ধন হিসেবে স্থগিত করা…
View Comments
Thanks for the recipe.