বর্তমানে ডায়াবেটিস বা সুগার শব্দটি আমাদের সবার কাছে খুবই পরিচিত। পারিপার্শ্বিক পরিবেশে বা প্রায় প্রতিটি পরিবারেই ডায়াবেটিসে ভুক্তভোগী মানুষের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়।
ডায়াবেটিসের কারণে পক্ষাঘাত, চক্ষুসমস্যা, হৃদরোগ, পচনশীল চর্মরোগ, পুরুষের যৌন অক্ষমতা এমনকি মহিলাদের ক্ষেত্রে মৃত শিশুর জন্ম দেওয়া, বেশি ওজনের শিশু জন্ম দেওয়া, অকাল সন্তান প্রসব এরকম বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়।
এই ডায়াবেটিস সারানোর উপায় কি?!
আমাদের আজকের বিষয় ডায়াবেটিস, আসুন দেখে নিন –
আমাদের শরীরে ইনসুলিন নামক হরমোনের ঘাটতির কারণে বিপাকজনিত সমস্যার সৃষ্টি হলে সাধারণত রক্তে গ্লুকোজ(সুগার) বা শর্করার পরিমাণ বেশি হয়ে যায়। আর রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করার পরিমাণ বেশি হয়ে গেলেই তখন শরীর আর তা যথাযথ ব্যবহার করতে পারে না ফলে দেখা দেয় ডায়াবেটিস মেলিটাস এর মত স্বাস্থ্যসমস্যা।
কেউ ডায়াবেটিস আক্রান্ত বেশ কিছু কারণে হতে পারে –
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়-
ডায়াবেটিসের(সুগারের) লক্ষণ কি আশা করি সেটা আপনাদের কাছে স্পষ্ট। ডায়াবেটিসের(সুগারের) লক্ষণ গুলি দেখলে শীঘ্রই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
সাধারণত একজন সুস্থ লোকের রক্তের প্লাজমায় গ্লুকোজের মাত্রা খাবার আগে ৫.৬ মিলি মোলের কম বা খাবার ২ ঘন্টা পর ৭.৮ মিলি মোলের কম থাকে। কিন্তু কোনো ব্যক্তির যদি রক্তের প্লাজমায় গ্লুকোজের মাত্রা খাবার আগে ৭.১ মিলি মোলের বেশি থাকে বা খাবার ২ ঘন্টা পর ১১.১ মিলি মোলের বেশি থাকে। তবে ঐ ব্যক্তি ডায়াবেটিস আক্রান্ত গণ্য হবে।
সাধারণত বিভিন্ন কারণে, বিভিন্ন টাইপের ডায়াবেটিস হয়-
যাদের শরীর থেকে ইনসুলিন তৈরী হয় না একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় তারা টাইপ ১ ডায়াবেটিসের রোগী। এদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন বাইরে থেকে দিতে হয়। এবং শৈশব থেকেই এরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে।
যে সব শরীরে ইনসুলিন তৈরী হয় তবে তার পরিমাণ সামান্য, তারা টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগী। মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি বিশেষ করে ৪০ বছর বয়সের পর থেকে এটি দেখা যেতে পারে।
অনেক সময় গর্ভাবস্থায় ও ডায়াবেটিস আক্রান্ত হন অনেকেই। যা পরে সন্তান প্রসবের পর চলে ও যায়। কিন্তু এই গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর দুজনের বিপদ এড়াতে ইনসুলিন দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন – এই সহজ পদ্ধতিতে মাত্র এক মাসেই কমান শরীরের অতিরিক্ত মেদ | Reduce Extra Body Fat In A Month
রক্তে সুগার বেড়ে যাওয়া ডায়াবেটিস মেলিটাসের মূল লক্ষণ। কোন ব্যাক্তির রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় এমনকি কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গিয়ে হার্ট অ্যাট্যাক বা স্ট্রোক ও হতে পারে।
আজকের আলোচনায় আমরা বিশদে দেখে নেবো:-
আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় যদি পাওরুটি, ভাত, আলু বা চিনি ও মিষ্টির মত অতিরিক্ত শর্করা যুক্ত খাবার থাকে তাহলে রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়।
অতিরিক্ত স্ট্রেস বা মানসিক চাপে ও রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
১. অনেক সময়ই কারো কারো অতিরিক্ত পিপাসা দেখা দেয়। এই অতিরিক্ত জল পানের ফলে বারবার প্রস্রাব করতে যেতে ও হয়। ফলে শরীরের রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং মাথাব্যথা, বমি, অবসন্নতার মত বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয় যা রক্তে সুগার-বৃদ্ধি জনিত সমস্যার ফলেই ঘটে।
২. চোখে ঝাপসা দেখা রক্তে সুগার-বৃদ্ধি জনিত সমস্যার ফলে হতে পারে। এমনকি চোখে ছানি ও পড়তে পারে রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে গেলে।
৩. রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে গেলে অবসন্নতা দেখা দেয় এবং ক্লান্ত লাগে।
৪. মাথাব্যথা রক্তে সুগার-বৃদ্ধি জনিত সমস্যার কারণে হয়ে থাকে।
৫. রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিডনির উপর চাপ পড়ে ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা হয়।
রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া কন্ট্রোল করা যায় বেশ কিছু উপায়ে-
একটি সুস্থ-স্বাভাবিক শরীর রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রনে যথাযথ ইনসুলিন তৈরী করতে পারে। তবে ডায়াবেটিস আক্রান্ত শরীর যথাযথ ইনসুলিন তৈরী করতে পারে না। ফলে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে বাইরে থেকে ইনসুলিন ব্যবহার করা হয়।
রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রনের আরেকটি উপায় হল কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স জনিত খাবার খাওয়া।যার ফলে রক্তের সুগার রোলার ওঠানামা বন্ধ হয
এছাড়াও সুগার(ডায়াবেটিস) কন্ট্রোল করার বা কমানোর(সারানোর) উপায় গুলির মধ্যে অন্যতম হল খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও শরীর চর্চা করা।
আমাদের দৈনন্দিন লাইফ স্টাইলকে একটু ব্যালেন্স করলে সুগার কন্ট্রোল
করা যায় অতি সহজেই। যেমন- খাদ্য তালিকা মেনটেন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপায়, রক্তে সুগারের পরিমাণ কন্ট্রোল করার জন্য।
| প্রতিদিন | সময় | করণীয় |
| সকাল ২ দিন খালি পেটে | ৬-৭টা | রাতে (১চামচ জিরা) ভেজানো ১গ্লাস জল |
| ৪ দিন খালি পেটে সকালে | ৬-৭টা | অ্যালভেরার জুস |
| ২ ঘন্টা গ্যাপ একটু পর | ৯ টা | গ্রীন টি, ক্রীমক্রেকার বিস্কুট |
| বেলায় | ১১ টা | রুটি সব্জি, ডিম সিদ্ধ ও ফল |
| দুপুর | ২ টা | ভাত, মুসুর ডাল/সোয়াবিন/রাজমা, মাছ/ডিম/মাংস ও সবুজ শাক সবজি। |
| সন্ধ্যা | ৫-৬টা | গ্রীন টি, মুড়ি/বিস্কুট |
| রাতে | ৯-১০টা | ভাত/রুটি, সবজি, মাছ বা ডিম |
যে কোনও রোগকে কন্ট্রোলে রাখতে ব্যায়াম বা শরীরচর্চা খুবই কার্যকরী উপায়। সুগার রোগীর ক্ষেত্রে ও সুগার নিয়ন্ত্রণে ব্যায়াম বা শরীর চর্চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে প্রতিদিন যদি নিয়ম করে একটু হাঁটা যায় রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয় এবং তাতে শরীর যথেষ্ট অ্যাক্টিভ ও সুস্থ থাকে।
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয় এবং পুরোপুরি নির্মূল হয় না। তবে চিকিৎসকদের মতানুযায়ী ওষুধ, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণে কিছুটা কন্ট্রোলে রাখা যায়। সুগার ধরা পড়লে অনেকেই টেনশনে পড়ে যায়। টেনশন না করে করণীয় হল-
আরও পড়ুন – ঘরোয়া উপায়ে চুলের যত্ন নিন | Best Hair Care Tips
সুতরাং ডায়াবেটিস বা রক্তে সুগার বেড়ে যাওয়া নিয়ে অযথা টেনশন না, উপরোক্ত আলোচনা অনুযায়ী চলুন।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং রোগ মুক্ত থাকুন। শরীর ও স্বাস্থ্যবিষয়ক আরও তথ্যাদি জানতে আমাদের সাথে থাকুন।
[বিভিন্ন তথ্য সংগৃহীত ও চিকিৎসকদের মতামত]
সকালবেলা আমরা যে উদ্দমের সাথে দিন শুরু করি যে এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আমরা সারাদিন আমাদের…
স্বপ্ন যা আমাদের বাঁচাতে অনুপ্রাণিত করে, স্বপ্ন পূরণ এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যার জন্য লড়াই করতে থাকি…
সকালের ক্লান্ত আভায় ভেসে রাতের অন্ধকারে শান্তি খুঁজে পাই। সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে চাঁদ মামার…
আমরা সকলেই স্মার্ট যুগে নানান গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে গুড মর্নিং বা সুপ্রভাত বা শুভ সকাল…
আমাদের জীবনে চলার পথে নানা বিষয় আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হয় ভালো মন্দ মিশিয়ে। মানুষের ব্রম্ভাস্থ…
বিবাহ খুব পবিত্র শব্দ যা শত যুগ ধরে দুটি মানুষের সারাজীবনের বন্ধন হিসেবে স্থগিত করা…
View Comments
খুব সুন্দর
আপনার পোস্টটি অনেক আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ধন্যবাদ আপনাকে ভাই❤
Welcome 😊