রসে রসে রসে ডুবে, স্বাদে স্বাদে স্বাদে ভবঘুরে এই গানটি মিষ্টি প্রেমীদের জন্যই প্রযোজ্য। মিষ্টির প্রতি আমাদের বাঙ্গালীর প্রেম কতটা সেটা হয়তো পরিমাপের দাড়িপাল্লায় মাপার সাধ্যি কারোর নেই। মিষ্টি বললেই আমাদের স্মরনে কিছু বিখ্যাত স্থানের মিষ্টির চিত্র ভেসে ওঠে , যেমন – শক্তিগড়ের ল্যাংচা, কৃষ্ণনগরের শরপুরিয়া, কলকাতার রসগোল্লা, বর্ধমানের সীতাভোগ, রানাঘাটেরর পান্তুয়া। অর্থাৎ মিষ্টির রাজত্ব যত্রতত্র। কিন্তু এত দূর গিয়ে মিষ্টির তৃপ্তি মেটানো খুবই কষ্টকর । তাই মিষ্টি খাওয়ার আশ সব সময় মেটানো সম্বব নয়। কিন্তু বাড়ি বসে মিষ্টি খাওয়ার আশ মেটানো গেলে কেমন হয় ? তাহলে চলুন বিখ্যাত স্থানের মিষ্টির থেকে আজ আমরা রানাঘাটের পান্তুয়া রেসিপি রপ্ত করি, আর ডুবে যাই রসে ভরা পান্তুয়ার স্বাদে।
বেশী সময় অতিবাহিত না করে সরাসরি যাওয়া যাক পান্তুয়া রেসিপি-এর অন্দরমহলে:
১) প্রথমে গ্যাস অন করে তাতে কড়াই বসিয়ে দুধ ঢেলে ১০মিনিট ধরে জ্বাল দিলাম। তারপর গোটা লেবুর রস দিয়ে দিলাম যাতে ছানা কেটে যায়।
২) ছানা থেকে জল আলাদা হয়ে গেলে গ্যাস বন্ধ করে দিন।
৩) এবার একটি পাতলা সুতির কাপড়ের মধ্যে ছানাটা ছেকে নিন । মাঝে একবার ছানাটা থান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন যাতে লেবুর রসের গন্ধ না থাকে। এবার হাত দিয়ে আস্তে চিপে চিপে ছানার ভিতরে থাকা সমস্ত জল বের করে নিতে হবে। কারন জল থাকলে কিন্তু মণ্ডটি ভেঙে যেতে পারে।
৪) ছানার নিংগরানোর সময় ভুলেও জোরে প্রেসার দেবেন না। কারন ছানার ভেতর যে ময়শ্চারাইজার থাকে সেটা চলে গেলে এর ফলস্বরূপ মিষ্টি শক্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।
৫) এখন ছানাটা একটি বড় প্লেইন পাত্রের মধ্যে রাখুন , তারপর তার মধ্যে ২ কাপ গুড়ো চিনি ও ভিজিয়ে রাখা সুজি দিয়ে ভালো করে হাতের তালু দিয়ে জোরে প্রেসার দিয়ে ঘষুন যতক্ষন না অবধি ছানাটা মোলায়েম হচ্ছে। কোন রকম শক্ত কিছু না থাকে।
৬) ছানা মসৃণ হয়ে গেছে ভালো ভাবে মেখে মন্ড বানিয়ে নিন। তার একটু একটু মন্ড নিয়ে তার মধ্যে একটি করে নকুলদানা ভরে হাতের সাহায্যে বলের আকারের ন্যায় গোল গোল করে গড়ে দিন।
৭) একটি পাত্রে ৩ কাপ চিনি নিয়ে তারমধ্যে ৮ কাপ জল দিয়ে চিনির শিরা তৈরি করুন।( শিরা বেশী ঘন না হয় তার জন্য জলের পরিমান বেশী নিতে হয়)।
৮) এরপর গ্যাস অন করে ১০ মিনিট মতো নিভু আঁচে ফোটান । ১০ মিনিট হয়ে গেলে শিরার ঘনত্ব পর্যবেক্ষন করে নিন।
৯) ১- ২ টুকরো এলাচ নিয়ে শিলনোড়ায় হালকা থেঁতো করে শিরার মধ্যে দিয়ে দিলে মিষ্টি থেকে অপূর্ব গন্ধ আসবে ।
১০) একটি বড় কড়াইয়ে ১/২ লিটার তেল নিয়ে তাকে হালকা গরম হতে নিন। মনে রাখবেন গ্যাসের আঁচ মিডিয়ামে থাকে।
১১) ১০ মিনিট এরকম হালকা আঁচে ভেজে নিন। ধীরে ধীরে পান্তুয়া ফুলে উঠলে ও পান্তুয়ার রং গাঁড় বাদামী হয়ে এলে সাবধানে হাতা দিয়ে তুলে শিরার মধ্যে দিয়ে দিন।
১২) ১৫ মিনিট শিরার মধ্যে ডুবিয়ে রাখলে পান্তুয়া শিরাকে ভালোভাবে টেনে নেবে।
ব্যাস রসে টইটোম্বুর পান্তুয়া তৈরি।
তারপর একটি কাঁচের পাত্রের মধ্যে পান্তুয়া রেখে তার উপর পেস্তা বাদাম কুচি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন বিখ্যাত রানাঘাটের পান্তুয়া।
পান্তুয়া রেসিপি খুবই সোজা এর জন্য প্রয়োজন আপনার ধৈয্য ও ভালবাসা।
আমরা অনেকেই ছানা তৈরির জন্য নর্মাল গরুর দুধ ব্যবহার করি। কিন্তু পান্তুয়ার ছানা তৈরির জন্য সবসময় ক্রিমযুক্ত দুধ ব্যবহার করা উচিত । কারণ ক্রিম দুধের স্বাদ অন্যন্য দুধের থেকে সম্পুর্ণ আলাদা আর একটু তৈলাক্ত হয় । এতে এক্সটা ফ্যাট থাকে। আর এই দুধ ব্যবহারে পান্তুয়া নরম হয়, খেতেও বেশ লোভনীয় হয়।
এলাচ চিনির শিরায় দিলে আর গন্ধটাই লাজাবাব হয়। এলাচের মধ্যে যে এরোমা থাকে তা মিষ্টির মধ্যে অতুলনীয়ভাবে অন্য ধরনের আমেজ সৃষ্টি করে। কিন্তু এক্ষেত্রে ভুলেও বড় এলাচ ব্যবহার করবেন না। মিষ্টির ক্ষেত্রে সর্বদা ছোট এলাচ প্রযোজ্য।
সুজি কিন্তু দুরকম ভাবে ধরা দেয়। শুকনো থাকলে মচমচে, আর ভেজা থাকলে নরম। সব মিষ্টিতে সুজি দেওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। কিন্তু পান্তুয়ার ক্ষেত্রে সুজি কিন্তু আলাদাই মাত্রা এনে দেয়। মিষ্টি তৈরির ক্ষেত্রে প্যাকেটের সুজি নেওয়া উচিৎ।
লকুলদানা অনেকেই মিষ্টির মধ্যে চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে। কিন্তু আমরা এখানে মিষ্টির ভেতরে গোটা দিয়েছি তাই যখন মিষ্টি তা খাবেন তখন ভেতরে নকুলদানা গলে আপনার মুখের মধ্যে সম্পূর্ন আলাদা একটি স্বাদ তৈরি করে।
পান্তুয়ার আসল দিক হল পান্তুয়া তৈরির জন্য বল সঠিকভাবে গড়তে হবে। আর জন্য যখন ছানার মন্ড তৈরি করবেন সেটি যেন লাম্পসবিহীন হয়।
শিরার মিশ্রণের ঘনত্বের পরমান সঠিক হওয়া খুব জরুরি পান্তুয়া তৈরির ক্ষেত্রে। কারন ঘনত্ব বেশী হলে রস ঢুকবে না মিষ্টির মধ্যে উল্টে বেশী আঠালো হয়ে যাবে যার ফলে ঠাণ্ডা হয়ে গেলে দানা পাকিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে, এক্ষেত্রে সেটি দানাদার মতো দেখতে হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন – রসগোল্লা বানানোর রেসিপি: বাড়িতে বসে শিখে নিন রসগোল্লা বানানোর পদ্ধতি
কি ? পান্তুয়া রেসিপি জানার পর নিজেকে আর আটকাতে পারছেন না তো। আর আটকাতেও হবে না। চটপট উপকরণসামগ্রী জোগাড় করে লেগে পড়ুন মিষ্টি তৈরির আয়োজনে। সকলকে আপনার হাতে গড়া পান্তুয়া খাইয়ে মন ভরিয়ে দিন। আর যদি কারোর রাগ ভাঙ্গাতে হয় তো এই পান্তুয়া রেসিপি একমাত্র সমাধান তার রাগকে জলে পরিণত করার। দেখবেন এই মিষ্টি খেয়ে সমস্ত রাগ-অভিমান ভুলে আপনার সাথে মধুরতায় মেতেছে।
আর হ্যাঁ এই পান্তুয়া রেসিপি খাইয়ে সত্যি কারোর মানভঞ্জন করলেন কিনা তা আমদের জানতে একদম ভুলবেন না কিন্তু। আর এই ধরনের আরও কোন রেসিপি জানতে চান সেটাও কমেন্ট করে লিখে জানান। আর অবশ্যই আমাদের পেজে নজর রাখুন।
সকালবেলা আমরা যে উদ্দমের সাথে দিন শুরু করি যে এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আমরা সারাদিন আমাদের…
স্বপ্ন যা আমাদের বাঁচাতে অনুপ্রাণিত করে, স্বপ্ন পূরণ এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যার জন্য লড়াই করতে থাকি…
সকালের ক্লান্ত আভায় ভেসে রাতের অন্ধকারে শান্তি খুঁজে পাই। সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে চাঁদ মামার…
আমরা সকলেই স্মার্ট যুগে নানান গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে গুড মর্নিং বা সুপ্রভাত বা শুভ সকাল…
আমাদের জীবনে চলার পথে নানা বিষয় আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হয় ভালো মন্দ মিশিয়ে। মানুষের ব্রম্ভাস্থ…
বিবাহ খুব পবিত্র শব্দ যা শত যুগ ধরে দুটি মানুষের সারাজীবনের বন্ধন হিসেবে স্থগিত করা…
View Comments
Nice Recipe