আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের একটি অমূল্য প্রাকৃতিক ভেষজ হল পুদিনা পাতা।পুদিনা পাতার উপকারিতার কথা মাথার রেখে এর ব্যবহার বহু প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে।তবে এটি মূলত ব্যবহৃত হয় খাদ্যে স্বাদবৃদ্ধি,ভেষজ চা তৈরি ও চাটনি,ঔষধ , জীবাণু নাশক ও সুগন্ধের জন্য। এর মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক আশ্চর্য গুন যা সত্যিই তাক লাগিয়ে দেবার মতো।
আসুন আজ তাহলে দেখে নেওয়া যাক সেই তাক লাগানো রহস্য যা পুদিনা পাতার উপকারিতা গুলিতে পাওয়া যায়:
উপরিউক্ত উপকারিতা গুলির বিস্তারিত ভাবে এবার দেখে নেওয়া যাক।
পুদিনা পাতা মূলত সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে কাজ করে। পুদিনা পাতা ত্বকের যেকোন সংক্রমণ ঠেকাতে এক অব্যর্থ ওষধি। পুদিনা পাতায় উপস্থিত অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাংগাল পদর্থ ব্রণ দূর করতে ও ত্বকের তেলতেলে ভাব কমাতে সহায়তা করে।ত্বকের পিগমেনটেসন ও ইরিটেসান কমাতে তাজা পুদিনা পাতা বেটে শসার রস ও মধু সহযোগে একটি প্যাক বানিয়ে নিন ত্বকে দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন কার্যকরী ফল পাবেন। পুদিনা পাতা ঠান্ডা করার মাধ্যম রূপে কাজ করে। মুখকে ব্রণের কালো দাগ মুক্ত করতে একটা কাজ করুন প্রত্যহ পুদিনা পাতার রস ব্রণ র দাগের উপর ঘণ্টা খানেক লাগিয়ে রাখুন। তারপর পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মাসখানেক পরেই লক্ষ্য করে দেখবেন ব্রণের দাগও উধাও হয়ে যাবে আর সঙ্গে বাড়তি পাওনা হিসেবে পাবেন কোমল মসৃণ উজ্জ্বল ত্বক।
প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে মত, পুদিনা পাতা হজমশক্তিবর্ধক ও গ্যাস নাশকনাশক এবং পাচনতন্ত্র সতেজ রাখার জন্য একে পাচনতন্ত্রের ধনন্তরী ও বলা হয়ে থাকে। পুদিনা পাতায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, যে টি পেটের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। যাঁরা দীর্ঘ দিন যাবৎ অম্বল ও বদহজমের সমস্যা ভুগে চলছেন এবং পেটের নানান সমস্যায়ও ভুগে থাকেন, এবং অনেক ওষুধ খেয়েও সমস্যা থেকে মুক্তি পাননি , তাঁরা একবার চেষ্টা করে দেখুন এই ঘরোয়া টোটকা খাবার পর । কয়েকটি তাজা পুদিনা পাতা গরম জলে ফুটিয়ে নিয়ে মধু মিশিয়ে খুব সহজে ঘরেই পুদিনা পাতার চা তৈরি ককরে খেয়ে দেখুন।১ কাপ পুদিনা পাতা চাই হয়তো আপনাকে দিতে পারে নানাবিধ সমস্যার সমাধান। কোষ্ঠকাঠিন্য র ক্ষেত্রেও খুব ভলো ফল দেয়। অরুচি ও গ্যাসের সমস্যায় ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে পুদিনা পাতার রসের সঙ্গে সামান্য লবন ও কাগজি লেবুর রস ঈষদুষ্ণ গরম জলে মিশিয়ে খেলে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়।
সর্দি হলে নাক বুজে যাওয়ার সমস্যায় প্রায় আমরা সকলেই ভুগে থাকি। সেই সময় যদি পুদিনা পাতার রস সেবন করা যায় তাহলে এই কষ্ট থেকে রেহাই পাবেন নিমেষেই। যাঁরা অ্যাজমা টিক টেন্ডেন্সি তে কষ্ট পান এবং কাশির সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের তাৎক্ষণিক আরামের জন্য পুদিনা পাতার রস অথবা পুদিনা পাতার চা বানিয়ে খেতে পারেন এটি বেশ কার্যকরী। খুব বেশি নিঃশ্বাসের এবং কাশির সমস্যায় পড়লে পুদিনা পাতা গরম জলে ফুটিয়ে সেই জলেরর ভাপ নিতে পারেন। পুদিনা পাতা কে গরম জলে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিয়ে সেই জল দিয়ে গার্গল করতে পারেন এতে সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়াও বুকে জমে থাকা কফ দূর করতে পুদিনা পাতার রস, তুলসী পাতার রস, আদার রস ও মধু এক সঙ্গে মিশিয়ে পান করুন । এটি কফ দূর করার অব্যর্থ উপায়।
যে কোনও ব্যথা থেকে রেহাই পেতে পুদিনা পাতার রস খুব উপকারী। চামড়ার ভেতরে গিয়ে নার্ভে পৌঁছায় এর কুলিং এফেক্ট নার্ভের ফোলা অংশ কমিয়ে ব্যাথা উপশম করে । তাই মাথা ব্যথা থেকে শুরু করে জয়েন্টে ব্যথা এই সকল ব্যাথার মুক্তি পেতে পুদিনা পাতার গুন অপরিহার্য। মাথার যন্ত্রনা থেকে রেহাই পেতে খেতে পারেন এক কাপ পুদিনা পাতার চা অথবা তাজা পুদিনাপাতা চিবিয়েও খেতে পারেন ।জয়েন্টে পেন রিলিফ এর ক্ষেত্রে পুদিন পাতা বেটে প্রলেপ খুব উপকারী। এছাড়াও মহিলা দের পিরিয়ডের যন্ত্রনায় পুদিনা পাতা অনবদ্য ভূমিকা পালন করে।হঠাৎ কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে নাকের কাছে পুদিনা পাতা ধরলে তৎক্ষণাৎ জ্ঞান ফিরে আসবে। এছাড়াও মাইগ্রেনে ব্যাথা সারাতেও পুদিনা পাতার জুরি মেলা ভার।
ওরাল যেকোন সমস্যা সমাধানের পুদিনা পাতা সিদ্ধাহস্ত। তাই বর্তমানে বিভিন্ন নামি দামী টুথপেস্ট ও মাউথ ওয়াশে পুদিনা পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।কেননা দাঁতের যেকোন সমস্যায় ও মাড়ি থেকে রক্ত পরার জন্যও পুদিনা পাতা ব্যবহার করলে তাৎক্ষণিক ফলাফল মিলবে।দাঁতের ক্ষয়ে যাওয়া আটকাতে ও মুখের দূর্গন্ধ থেকে বরাবরের জন্য মুক্তি পেতে ব্যবহার করুন পুদিনা পাতা । জলের সঙ্গে পুদিনা পাতা ফুটিয়ে সেই জল দিয়ে কুলি করলে উপকার পাওয়া যায় অতি সহজেই।এছাড়াও যদি পুদিনা পাতা পুড়িয়ে ছাই করে নিয়ে সেই ছাই কে মাজন বানিয়ে দাঁত মাজালে মাড়ি ও সুস্থ থাকবে আর দাঁত ও হবে শক্ত ও মজবুত ।
অনেক সময় অত্যধিক কম জল পান করার ফল স্বরূপ অল্প প্রস্রাব নির্গমন হয় । সেক্ষেত্রে অনেক সময় তলপেটে ব্যাথা ও জ্বালা অনুভূত হয়। এতে পুদিনা পাতার সহিত পাতিলেবুর রস একত্রে শরবত বানিয়ে খেলে এই সমস্যা থেকে আরাম মেলে।
বর্তমানে বেহিসাবি জীবন-যাপনে স্থূলতা একটি মস্ত বড় সমস্যা। সকলের সুন্দর ফিগারের অধিকারী হতে চান। পুদিনা পাতায় আছে সেই জাদু। একটু এক্সারসাইজ, সামান্য ডায়েট আর তিন বেলা পুদিনা পাতার চা। পুদিনা পাতা, মৌরি,গোল মরিচ আর মধু দিয়ে তৈরি এই চা শরীরের বাড়তি মেদ ঝড়ে যেতে সহায়তা করে। এবং এর কুলিং এফেক্ট মন কে রিফ্রেশ করতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন – বাসক পাতার উপকারিতা: জেনে নেওয়া যাক বাসক পাতার নানাবিধ গুনাবলী
এই অধিক গুণসম্পন্ন পুদিনা পাতার উপকারিতা কিন্তু প্রচুর যা দেখে প্রতক্ষ্য করা সত্যিই কঠিন। নিজেকে সুস্থ রাখতে এবং পরিবারের সকল সদস্যদের খেয়াল রাখতে তাই অতি অবশ্যই পুদিনাপাতা নিয়মিত আহার করুন।আর উপকার পান হাতে নাতে।
ভেষজ উদ্ভিদ সম্পর্কে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আজ আপনাদের সামনে নিবেদন করতে পেরে ভালো লাগল। আশা করি সকল উপকৃত হবেন। আপনাদের ভালো থাকা আমাদের একান্ত কাম্য। কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন কেমন লাগল।
ধন্যবাদ।।
সকালবেলা আমরা যে উদ্দমের সাথে দিন শুরু করি যে এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আমরা সারাদিন আমাদের…
স্বপ্ন যা আমাদের বাঁচাতে অনুপ্রাণিত করে, স্বপ্ন পূরণ এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যার জন্য লড়াই করতে থাকি…
সকালের ক্লান্ত আভায় ভেসে রাতের অন্ধকারে শান্তি খুঁজে পাই। সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে চাঁদ মামার…
আমরা সকলেই স্মার্ট যুগে নানান গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে গুড মর্নিং বা সুপ্রভাত বা শুভ সকাল…
আমাদের জীবনে চলার পথে নানা বিষয় আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হয় ভালো মন্দ মিশিয়ে। মানুষের ব্রম্ভাস্থ…
বিবাহ খুব পবিত্র শব্দ যা শত যুগ ধরে দুটি মানুষের সারাজীবনের বন্ধন হিসেবে স্থগিত করা…