হার্ট অ্যাটাক-কে ভয় নয়!
হার্ট অ্যাটাক এবং তার কারণে মৃত্যু- আজ একটি সাধারণ কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতে প্রতি বছর ১০ মিলিয়নের বেশি লোক হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়। আমরা আমাদের হৃদয় নিয়ে খুব স্পর্শকাতর হতে পারি, কিন্তু প্রতিদিনের কাজের চাপে হৃদপিণ্ডের খেয়াল রাখতে ভুলে যাই। আসুন আজ আমরা জেনে নিই হার্ট অ্যাটাক কী এবং হার্ট অ্যাটাকের কারণ, লক্ষণ এবং সর্বোপরি হার্টকে সুস্থ রাখার উপায়গুলি।
কোনও কারণে হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি হলে তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। যদি কোনও শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে যায়, হৃদপিণ্ডের মাংসপেশীতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই হার্টের টিশু অক্সিজেনের অভাবে মরতে শুরু করে। তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই নেমে আসে মৃত্যু।
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ধূমপান, মদ্যপান, দুশ্চিন্তা, হাই প্রেশারের কারণে হার্ট অ্যাটাক সাধারণত হয়ে থাকে। হৃদবিজ্ঞানী এবং কার্ডিওলজিস্ট -এঁরা যৌথ ভাবে কিছু কারণ বলেছেন । রিসার্চে দেখা গেছে, কিছু মানুষদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি বেশি যেমন-
এছাড়াও দেখা গেছে স্থূলতা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসও হার্ট অ্যাটাকের কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন হার্ট অ্যাটাকের একমাস আগে থেকেই আভাস পাওয়া যায়। দেখা গেছে, অ্যাটাকের এক মাস আগে থেকেই শারীরিক দুর্বলতা, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হতে থাকে। যদি সামান্য পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠেন কিংবা দম বন্ধ হয়ে আসে, বুক থেকে হালকা ব্যথা কাঁধ এবং বাঁ-হাতে হতে থাকে, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যিক। বুক ধরা, মাথা ঝিম ঝিম, বুকে চাপ অনুভব করা, সহজেই ক্লান্তি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিলে বুঝতে হবে হৃদরোগের সম্ভাবনা।
ডায়বেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা ছাড়াও অহেতুক অতিরিক্ত ঘাম, বুক ধড়ফড় করতে থাকলে কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গবেষকরা দেখেছেন, হার্ট অ্যাটাকের আগে বেশিরভাগ আক্রান্তদের বদহজমের সমস্যা দেখা যায়। এইসময় কোনও কারণ ছাড়া মাথা ঘোরা বা বমি বমি ভাবকে তুচ্ছ করা উচিত না।
শুধু এই নয়, হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ হিসেবে কিছু বিশেষ অঙ্গে ব্যথাকেও ধরা যেতে পারে। যেমন পেটের উপরিভাগ, কাঁধ, পিঠ, গলা, দাঁত বা চোয়ালে হুট করে তীব্র ব্যথা বা চাপ অনুভব করা।
কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের সময় বুকে ব্যথা অনুভব হয় না। এক্ষেত্রে কোনও অস্বাভাবিক চাপ অনুভব হচ্ছে কিনা বুকে ,তার দিকে খেয়াল দিতে হবে। শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা হচ্ছে কিনা তার দিকেও নজর দিতে হবে।
যারা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নয়, তারা কিভাবে হৃদযন্ত্রের যত্ন নিতে পারেন তা বলতে গিয়ে বিশিষ্ট ডঃ দেবী শেঠি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন।
হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বুঝতে পারলে তখনই অ্যাসপিরিন বা ওয়ারফেরিন ফর্মুলার ওষুধ খাওয়ানো অত্যাবশ্যক। যদি পাওয়া যায়, অ্যাসপিরিনের সাথে সাথে সর্বিট্রেট ট্যাবলেটও রাখা উচিত। এতে রক্ত জমাট বাঁধতে পারবে না। নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে জিহ্বার নিচে করা যেতে পারে। যত শীঘ্র সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
প্রাথমিকভাবে অন্য কেউ আক্রান্তের বুকের ওপর পাম্প করে হৃদযন্ত্রের রক্ত চলাচলে সাহায্য করতে পারে। আক্রন্তকারী যদি একা থাকে সেক্ষেত্রে বুকে ব্যথা উঠলেই বারবার উচ্চস্বরে কাশি দেওয়া উচিত।
যতক্ষণ রোগী ডাক্তারের কাছে না পৌঁছচ্ছে, রোগীকে এবং আশেপাশের লোকেদের মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে।
আমরা যদি একটু স্বাস্থ্য সচেতন থাকি, তবে কিছু সহজ উপায় নিজেদের হৃদযন্ত্রের সমস্যা থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারি। যার ফলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনাও খুব কমে যেতে পারে।
পরিমিত আহার এবং নিয়মিত ব্যায়াম করলে শুধু হার্ট কেন, শরীরের সমস্ত কলকব্জা সুস্থ থাকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দিনে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলেও হার্ট তরতাজা থাকবে। একটু হাঁটা বা সাংসারিক কাজের মধ্যে দিয়েও ব্যায়াম হতে পারে।খাবারের মধ্যে রেড মিট বা স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে এমন খাবার এড়িয়ে চলুন।খাবারে লবণের পরিমাণ কমান। শাক, সবজি এবং ফল প্রতিদিন খান।
দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততার মধ্যেও মানসিক চাপ যত কম নেওয়া যায় ততই শ্রেয় হার্টের জন্য। কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিন। একটানা বসে থাকবেন না। প্রতি ৫০ মিনিট অন্তর, ১০ মিনিট বিশ্রাম নিন। গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়ুন ডেস্ক থেকে। এতে হার্ট ও ব্রেন -দুই যন্ত্রেই রক্ত চলাচল বাড়বে এবং চনমনে ভাব ফিরে আসবে। এতে আপনার কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।
ধূমপান এবং মদ্যপান থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। ধূমপানের অপকারিতা অগুন্তিক। এই বদঅভ্যাস অবিলম্বে ত্যাগ করুন। মদ্যপান এড়িয়ে চলুন। দেখবেন আপনার হার্ট ভালো আছে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। তৈলাক্ত খাবার বা জাঙ্ক ফুড যত পারবেন কম খান। পুষ্টিকর খাবার খান। পরিমিত খাবার খান। প্রয়োজনে ডায়েটেশিয়ানের কাছে যান। এতে আপনার লাভ।
ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখুন। আমরা সকলেই খুব সহজে জীবনের খারাপ দিকগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে ফেলি। এতে শুধু আমাদের মন খারাপ হয় না আমাদের হার্টের ব্যামোও হয়। চেষ্টা করুন মন ভালো রাখতে। মন খারাপ হলে ভালো গান শুনুন বা ভালো বই পড়ুন। মন ভালো রাখার বিভিন্ন রাস্তা আছে, যা আমরা নিজেরাই বার করতে পারি। কিন্তু যদি তা না পারি, তখন মনোবিজ্ঞানীর সাহায্য নেওয়া দরকার।
স্ট্যাটিসটিক্স বলছে, ভারতে হার্ট অ্যাটাকের জন্য মৃত্যু নাকি প্রতি বছরে ১০ মীলিয়নের বেশি। ২০২১ এ দি ওয়র্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট বলছে ভারত ১৪০ ক্রমাঙ্কে। আমাদের সকলের উচিত হৃদযন্ত্রের সাথে সাথে মনকে ভালো এবং সুস্থ রাখা। আশা করি এই উপরিউক্ত লেখাটি আপনার হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করবে। লেখাটি পড়ে কেমন লাগলো, জানাবেন।
সুস্থ থাকুন, আপনজনদের মধ্যে লেখাটি শেয়ার করে সকলকে সুস্থ রাখুন।
সকালবেলা আমরা যে উদ্দমের সাথে দিন শুরু করি যে এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আমরা সারাদিন আমাদের…
স্বপ্ন যা আমাদের বাঁচাতে অনুপ্রাণিত করে, স্বপ্ন পূরণ এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যার জন্য লড়াই করতে থাকি…
সকালের ক্লান্ত আভায় ভেসে রাতের অন্ধকারে শান্তি খুঁজে পাই। সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে চাঁদ মামার…
আমরা সকলেই স্মার্ট যুগে নানান গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে গুড মর্নিং বা সুপ্রভাত বা শুভ সকাল…
আমাদের জীবনে চলার পথে নানা বিষয় আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হয় ভালো মন্দ মিশিয়ে। মানুষের ব্রম্ভাস্থ…
বিবাহ খুব পবিত্র শব্দ যা শত যুগ ধরে দুটি মানুষের সারাজীবনের বন্ধন হিসেবে স্থগিত করা…
View Comments
Heya i am for the first time here. I found this board and I find
It really useful & it helped me out a lot. I hope to give something back and aid others like you aided me.