একজন মা যখন গর্ভ ধারণ করেন তখন তা তার পরিবারে খুশির খবর বহন করে আনে। বলাবাহুল্য, এই সময়ে অনেকেই অনেক রকম পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে একথা সত্য যে একজন মায়ের সুস্বাস্থ্যের উপর তার সন্তানের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নির্ভর করে থাকে। তাই একজন অন্তঃসত্ত্বা বা গর্ভবতী মায়ের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে কড়া সতর্কতা গ্রহণ করতে হয়। কোনোরকম ভুল পদক্ষেপ মা এবং সন্তান দুজনের ক্ষেত্রেই বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
মা যদি ঠিকমতো খাদ্য গ্রহণ না করেন, তবে গর্ভস্থ বাচ্চা অপুষ্টির শিকার হতে পারে। সন্তানের ওজন কম হতে পারে, স্বাস্থ্যের বিকাশ ঘটে না এবং বুদ্ধির বিকাশেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই মা এর নিজের যাতে স্বাস্থ্যহানি না ঘটে, কি কি পদক্ষেপ এক্ষত্রে অবলম্বন করতে পারেন তার জন্য আজকের আমাদের এই ব্লগটি বিশদে উপস্থাপনা করছি।
গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন প্রতিটি মাই চেয়ে থাকেন যাতে তার সন্তান সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় জন্ম নিতে পারে। তার জন্য এই অন্তঃসত্বা অবস্থায় মায়েদের প্রয়োজন অত্যন্ত সতর্ক থাকা এবং সম্ভাব্য বিপদ গুলিকে এড়িয়ে চলা। কখনো কোনো জটিলতা যদি দেখা যায়, তার থেকে যাতে সকল মায়েরাই সঠিক পদক্ষেপ বেড়িয়ে আসতে পারেন তার জন্য কতগুলি বিপদ চিহ্নের কথা নিচে আমরা উল্লেখ করলাম-
অন্তঃসত্ত্বা বা গর্ভবতী মায়ের যত্ন নেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে কখনো কোনো রক্তপাত হচ্ছে কিনা। যদি একমাত্র প্রসবের সময় ছাড়া গর্ভাবস্থায় হঠাৎ রক্তপাত হতে শুরু করে বা প্রসবের পর অতিরিক্ত মাত্রায় রক্তপাত হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে সেটি একজন মায়ের ক্ষেত্রে বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। এইরকম পরিস্থিতির যদি কোনো সম্ভবনা দেখা যায়, তাহলে পরিবারের কোনো রকম চিন্তা না করেই তৎক্ষণাৎ মাকে কোনো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা।
অনেক সময় অন্তঃসত্বা থাকাকালীন, প্রসবের এর সময় অথবা প্রসবের পরে মায়েদের শরীরে খিঁচুনি দেখা যেতে পারে। ডাক্তারদের মতে, এই খিঁচুনি হলো একলামসিয়ার একটি প্রধান লক্ষণ। এমতাবস্থায়, দেরি করা উচিত নয়, বরং খুব শীঘ্রই ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে মা এবং বাচ্চা দুজনেরই চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন। নচেৎ, এই ধরণের রোগে মা ও বাচ্চা দুজনেরই মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
একজন অন্তঃসত্ত্বা বা গর্ভবতী মায়ের যত্ন নেওয়ার সময় আরো একটি বিপদ সংকেত সম্পর্কে অবগত থাকা বিশেষভাবে জরুরি- উচ্চ রক্তচাপ থাকা, যা মা এবং তার সন্তান, দুজনেরই বিপদের কারণ হতে পারে।এইরকম অবস্থায় কম ওজনের শিশু জন্ম বা অপরিণত অবস্থায় শিশুর জন্মদান, সিজার-এর সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে নানা রকমের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন উচ্চ রক্তচাপের সাথে যদি ইউরিন-এ প্রোটিন বা এলবুমিনও পাওয়া যায়, তাহলে বুঝে নিতে হবে যে মা প্রি-এক্লাম্পসিয়া-তে ভুগছেন। ফলস্বরূপ, মা ও শিশু মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
একজন অন্তঃসত্বা মায়ের জন্য উল্লিখিত কয়েকটি বিপদ সমূহের মধ্যে একটি অন্যতম হলো গর্ভাবস্থায় অথবা প্রসবের সময় বা পরে হঠাৎ তীব্র মাথা যন্ত্রনা শুরু হয় বা চোখে জল আসা, চোখে ঝাপসা দেখা। তাই অন্তঃসত্ত্বা বা গর্ভবতী মায়ের যত্ন নেওয়ার অংশ হিসেবে এই বিষয়ে মায়েদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা বিশেষভাবে প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
বড় বড় বিশেষজ্ঞ ও ডাক্তারের মতে অন্তঃসত্বা অবস্থায় বা বাচ্চা প্রসবের পরে ভীষণ জ্বর আসা, বা তিনদিনের বেশি সেই জ্বর থেকে যাওয়া, অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব বের হওয়া অনেক ক্ষেত্রে মূত্রনালীতে সংক্রমণের ইঙ্গিত হতে পারে। তবে এইরকম পরিস্থিতিতে শীঘ্রই ডাক্তারের পরামর্শমতো চিকিৎসা করতে পারলে এই বিপদ সহজেই কেটে যাবে।
অনেকসময় বিলম্বিত প্রসব হলে বা প্রসবব্যাথা যদি ১২ ঘন্টার বেশি স্থায়ী হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষত্রে সরাসরি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সাহায্য নেওয়াই কাম্য।
অন্তঃসত্ত্বা বা গর্ভবতী মায়ের যত্ন নেওয়ার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো সঠিক সময়ে সঠিক ওষুধ সেবন করা। আমরা যেসব ওষুধ সাধারণত সেবন করে থাকি তাদের সবারই কিছু না কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া অনেক বেশি প্রয়োজন।
গর্ভাবস্থা হলো এমনই এক সময় একজন মায়ের জীবনে, যখন তিনি নিজের সবচেয়ে বেশি যত্ন নেওয়ার ও বিভন্ন রকম স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করেন। তাই অন্তঃসত্ত্বা বা গর্ভবতী মায়ের যত্ন নেওয়ার সময়ে সাধারণ অসুস্থতার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ওষুধগুলি বেঁচে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। বিশেষত আপনার প্রষ্টোম ট্রাইমেস্টারর সময় না নিজে থেকে ওষুধ চয়ন করার থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। নতুবা, আপনার এবং বিকাশমান শিশু দুজনের ক্ষেত্রেই ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
প্রসবকালীন যে ভিটামিন ওষুধগুলি ডাক্তারবাবু প্রেস্ক্রাইব করে দিয়েছেন তা গর্ভবস্থায় থাকাকালীন মায়ের পক্ষে সেবন করা অত্যন্ত নিরাপদ এবং প্রয়োজন। নিচে আমরা কিছু ওষুধ এর জেনেরিক নাম কথা উল্লেখ করলাম যা গর্ভাবস্থায় আপনি নিতে পারেন-
অবস্থা | ওষুধ |
অ্যালার্জি | লোরাটাডাইন, ডিফেনহাইড্রামাইন, সেটিরাইজাইন |
কোষ্ঠকাঠিন্য | মিথাইলসেলুলোজ, মিনারেলয়েল জ্যুস আকারে (৩০ এমএল), সেনোসাইড, ডোকুসেট সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম পলিকার্বোফিল |
কাশি (অ্যালকোহলহীন সিরাপ) | ডেক্সট্রোমেথরফান হাইড্রোব্রোমাইড, ডেক্সট্রোমেথরফান, গুয়াইফেনেসিন |
জ্বর | অ্যাকেটামাইনোফেন |
ডায়রিয়া | লোপারামাইড |
গ্যাস | সিমেথিকোন |
বুকজ্বালা বা অম্বল | ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, ফ্যামোটিডাইন, র্যানিটিডাইন |
বমি বমিভাব / বমি, মোশন সিকনেস | ডিমেনহাইড্রিনেট, ভিটামিন বি-৬, ডোক্সিলামাইন সাক্সিনেট |
এছাড়া যেসব ওষুধগুলি গর্ভাবস্থায় আপনার বর্জন করা উচিত তারও একটি তালিকা আমরা দিলাম-
সুতরাং অন্তঃসত্ত্বা বা গর্ভবতী মায়ের যত্ন নেওয়ার সময় মা এবং ডাক্তার দুজনেরই সচেতন থাকা খুবই জরুরি। কারণ সামান্য একটু ভুল মা ও তার সন্তান দুজনেরই পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। আশা করা যায় যে সকলেই এই সম্পর্কে সচেতনতা গ্রহণ করবে।
একজন অন্তঃসত্ত্বা বা গর্ভবতী মায়ের যত্ন নেয়ার সময় মায়েরা দ্বিধায় থাকতে পারেন যে কোন খাদ্য খাবেন বা কোনটি খাবেন না তাই নিয়ে। তবে সবার প্রথমে মায়ের খাদ্য নির্বাচনের সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলি মাথায় রাখা খুবই দরকারি-
উপরোক্ত বিষয়গুলির কথা মাথায় রেখে আমরা এখানে মাসভিত্তিক খাদ্যতালিকা উল্লেখ করলাম যা মা ও তার সন্তান দুজনেরই পক্ষে পুষ্টিকারক।
প্রথম ট্রাইমেস্টার- দৈনিক ১৬০০ ক্যালরি
দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার- দৈনিক ১৯০০ ক্যালরিঃ
তৃতীয় ট্রাইমেস্টার- দৈনিক ২১০০ ক্যালরিঃ
একজন অন্তঃসত্ত্বা বা গর্ভবতী মায়ের যত্ন নেওয়ার সময় যেমন দেখে নিতে হয় কি কি খাবার খাওয়া মা ওর সন্তান দুজনের পক্ষেই জরুরি, তেমনি যে খাবারগুলি উভয়ের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ তাও জেনে নেওয়া আমাদের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি। তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো-
আরও পড়ুন – গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কি? সহবাসের কতদিন পর গর্ভবতী হয়
উপরোক্ত তালিকাতে সামগ্রিক ভাবে একজন গর্ভবতী মায়ের কি কি খাওয়া উচিত আর কোনগুলি নয় তার একটি চিত্র উপস্থাপনা করা হলো। তবে এক্ষেত্রে সবার প্রথমে একটি সুস্থ খাদ্যতালিকা তৈরী করার জন্য আপনার ডাক্তারের সাথে বিশদে আলোচনা করে নেবেন, কারণ মনে রাখতে হবে এই কটি মাস একজন হবু মা এর পক্ষে একটি কঠিন লড়াই। সঠিক উপায়ে অন্তঃসত্ত্বা বা গর্ভবতী মায়ের যত্ন জন্য নেওয়া সম্পন্ন হলেই তবেই মা-সন্তান দুজনেই ভালো থাকবেন।
গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন প্রতিটি মায়ের দরকার নিজের সম্পূর্ণ যত্ন নেওয়া। তার জন্য কি কি করতে পারেন তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো-
তাহলে আজকের উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা দেখে নিলাম কি করে একজন অন্তঃসত্ত্বা বা গর্ভবতী মায়ের যত্ন নেওয়া যেতে পারে। আশা করা যায়, এই ব্লগটি পড়ে হবু মায়েরা সহজেই বুঝতে পারবেন কি কি উপায়ে নিজের খেয়াল রাখা সম্ভব ও সাথে সাথে নিজেকে ও নিজের সন্তানকে সুস্থ জীবন প্রদান কড়া যেতে পারে।
সকালবেলা আমরা যে উদ্দমের সাথে দিন শুরু করি যে এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আমরা সারাদিন আমাদের…
স্বপ্ন যা আমাদের বাঁচাতে অনুপ্রাণিত করে, স্বপ্ন পূরণ এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যার জন্য লড়াই করতে থাকি…
সকালের ক্লান্ত আভায় ভেসে রাতের অন্ধকারে শান্তি খুঁজে পাই। সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে চাঁদ মামার…
আমরা সকলেই স্মার্ট যুগে নানান গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে গুড মর্নিং বা সুপ্রভাত বা শুভ সকাল…
আমাদের জীবনে চলার পথে নানা বিষয় আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হয় ভালো মন্দ মিশিয়ে। মানুষের ব্রম্ভাস্থ…
বিবাহ খুব পবিত্র শব্দ যা শত যুগ ধরে দুটি মানুষের সারাজীবনের বন্ধন হিসেবে স্থগিত করা…