আমরা সবাই জানি দূর্গা পূজা হল আপামর বাংলা তথা বাঙালীর সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব। প্রত্যেক বাঙালির স্মৃতি থাকে এই দূর্গা পূজাকে ঘিরে। ঐতিহ্যবহনকারী, জাঁকজমকপূর্ণতা, আভিজাত্যের ছাপে মোড়া, নোস্টালজিক এই উৎসবের জন্য সারাবছর ধরে ছোট-বড়ো সকলেই অপেক্ষা করে থাকেন। দূর্গাপূজা মানেই প্রথম যে নামটি আমাদের মনে পড়ে তা হল কলকাতা, হ্যাঁ আমাদের তিলোত্তমা-যাকে ঘিরে আলোচনা, হই-হুল্লোড়, উত্তর-দক্ষিণের মধ্যে (এ বলে আমায় দেখ তো অন্য জন বলে আমায় দেখ) টক্কর এখানকার মানুষকে প্রাণচ্ছল করে রেখেছে। বলাবাহুল্য এখানে সাবেকিয়ানা আর থিম পূজার মধ্যে টক্কর দূর্গাপূজাকে করে তোলে বাঙালীর উত্তেজনার প্রানকেন্দ্র। আজ আপনাদের সামনে উত্তর কলকাতার ও দক্ষিণ কলকাতার সেরা বনেদি বাড়ির পূজা নিয়ে নানা অজানা কথা তুলে ধরব।
এইসব বাড়ি গুলি হল:
আসুন দেখি এই সমস্ত বনেদি বাড়ির সমৃদ্ধশালী দূর্গা পূজা, অনন্য রীতিনীতি যা সহস্র বছর ধরে চলে আসছে।
উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়ির পূজার মধ্যে শোভাবাজার রাজবাড়ি হল অতি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পূজা। পলাশির যুদ্ধের বছরে রাজা নবকৃষ্ণ দেব শোভাবাজারে অর্থাৎ বর্তমানে ৩৬, রাজা নবকৃষ্ণ দেব স্ট্রিট, শোভাবাজার, কলকাতা দূর্গাপূজা প্রতিষ্ঠা করে। ব্রিটিশ সাহেব দের কাছে তিনি বিখ্যাত থাকায় এই পূজায় লর্ড ক্লাইভ এবং ওয়ারেন হেস্টিংস এর মতো গন্যমান্য অতিথিদের নাম পাওয়া যায়। শোভাবাজার রাজবাড়ীর পূজা বর্তমানে দুটি নিবাসে অনুষ্ঠিত হয় ;এক,৩৩ রাজা নবকৃষ্ণ দেব স্ট্রিট, শোভাবাজার,(ছোটবাড়ি) আর দুই, (বড়োবাড়ি) উপরিউক্ত নিবাসটি। কোনো পশুবলি দেওয়া হয় না। এখানে দূর্গামা বৈষ্ণবী মা রূপে পূজিত হন। আজও এখানে একচালার মূর্তি পূজার প্রচলন আছে। বাড়ির ঠাকুর দালানেই প্রতি বছর মাতৃ কাঠামো তৈরি হয়।
আর দেরি কিসের দেখে নেওয়া যাক শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গা ঠাকুরের ছবি।
উত্তর কলকাতার দূর্গাপূজার পরম্পরাবাহক হিসাবে হাটখোলা দত্তবাড়ির নাম অধিক জনপ্রিয়। বর্তমানে ৭৮, নিমতলা ঘাট স্ট্রিটে অবস্থিত এই রাজবাড়িতে জগতরাম দত্ত দূর্গাপূজা প্রতিষ্ঠা করেন। এই বনেদি বাড়ির পূজার মতোই রীতিনীতিতেও পাওয়া যায় অভিনবত্বের ছোঁয়া। এই বাড়ির পূজায় প্রতিমা ডাকের সাজে সজ্জিত হয় এবং পড়ানো হাতে আকাঁ শাড়ি। এই বনেদি বাড়ির পূজার সাথে কৃষ্ণলীলা ও চন্ডীকাহিনী অতপ্রত ভাবে জড়িত, যা এই পরিবারের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
হাটখোলা দত্তবাড়ির দুর্গা ঠাকুরের ছবি দেখেনিন এক নজরে।
আরও পড়ুন – মা লক্ষ্মীর কৃপা পাওয়ার উপায়: এই ৮ টি কাজ করলে প্রসন্ন হবেন লক্ষ্মী দেবী
উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়ির পূজো মানেই সাবেকিয়ানা। ঠনঠনিয়া দত্তবাড়ি এর ব্যতিক্রমী নয়। এই পরিবারের পূজা শুরু করেছিলেন দ্বারকানাথ দত্ত ১৮৫৫ সালে যা বর্তমানে ৩নং বিধান সরনী-তে অবস্থিত। এই পরিবারের দূর্গাপূজা সংক্রান্ত রীতিনীতি অভুতপূর্ব এক দৃষ্টান্ত যা আপনাকে অবাক করবেই। এই পরিবারের পূজায় সিংহ এবং অসুর থাকে না। আর মা শিবের কোলে থাকেন। এখানে মা দ্বিভূজা রূপে পূজিত হন। সবথেকে বড়ো আকর্ষণ ধুনো পোড়ানো।
তাহলে এবার দেখে নেওয়ার পালা ঠনঠনিয়া দত্তবাড়ির দূর্গা প্রতিমার ছবি।
ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির থেকে সামান্য দূরত্বে বনেদিয়ানা সম্পন্ন এক ঐতিহ্যবান পরিবার পাথুরিয়াঘাটা ঘোষবাড়ি। এই পরিবারের দূর্গাপূজা এক সমৃদ্ধশালী বনেদি বাড়ির পূজা নামে খ্যাত।এই বাড়ির অতুলনীয় রীতিনীতির নজির আজও বর্তমান। এখানে মাদূর্গার বাহন ঘোটক সিংহ, সিংহ থাকে না। রূপার সিংহাসনে রূপার সাজে মা পূজিত হন আজও এই নিয়মের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এবার দেখেনিন পাথুরিয়াঘাটা ঘোষবাড়ির দুর্গা ঠাকুরের ছবি।
মানিকতলার বিখ্যাত ছাতুবাবু লাটুবাবু্ রাজবাড়ির কথা উত্তরকলকাতার বনেদি বাড়ির পূজোতে আসবে না তা আবার হয় নাকি। ঈশ্বর রামদুলাল দেব ১৭৭০ সালে এই পূজা প্রতিষ্ঠা করেন। রথযাত্রার দিন কাঠামো পূজা দিয়েই এই পরিবারের দূর্গাপূজা শুরু হয়। এখানে মূর্তির পশ্চাতে “চালচিত্র” হল অন্যতম বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি।
চলুন চটপট দেখেনি ছাতুবাবু লাটুবাবু রাজবাড়ির দুর্গা ঠাকুরের ছবি।
এবার আসা যাক একটুদক্ষিন কলকাতার পূজা গুলিতে। উত্তর কলকাতার ও দক্ষিণ কলকাতার সেরা বনেদি বাড়ির পূজা উপলক্ষে ভবানীপুর এলাকায় রাধা গোবিন্দ মল্লিকের এই মল্লিক বাড়ি অনন্য নজির স্থাপন করে। বর্তমানে যা মোহনী মোহন রোড, ভবানীপুরে অবস্থিত। এঁনাদের আদি বসতি বর্ধমান জেলায়। পরবর্তীকালে রাধা গোবিন্দ মল্লিক ১৮৬০ সালে এখানে এই মল্লিক তৈরি করেন এবং ১৯২৫ সালে দূর্গাপূজা প্রতিষ্ঠা করেন। বৈষ্ণব এই পরিবারের পূজার প্রতিটি দিন নিরামিষ খাবার খাওয়া হয়। এই বাড়ি বৈষ্ণব হওয়ায় কোনো দান পূজায় হয় না। কিন্তু কীর্তনের আসর এই বাড়ির পূজার অন্যতম আকর্ষন হয়ে আছে। আসুন এবার দেখেনি মল্লিক বাড়ির দূর্গা ঠাকুরের ছবি।
দক্ষিণ কলকাতার বড়িশায় বিখ্যাত সাবর্ণ রায় চৌধুরী বাড়িতে দূর্গাপূজা দক্ষিণ কলকাতার বনেদি বাড়ির পূজা গূলির মধ্যে সব থেকে ঐতিহ্যবাহী একটি পূজা। সাবর্ণ হল এই রায় চৌধুরী পরিবারের গোত্র আর রা চৌধুরী হল উপাধি যা মুর্শিদ কুলি খাঁ-র সময় কেশবরাম মজুমদার লাভ করেন তখন থেকে এই পরিবার বিখ্যাত সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার নামে পরিচিত। বর্তমানে মোট আটটি সাবর্ণ রায় চৌধুরী বাড়ি আছে যার মধ্যে ছ’টি এই বড়িশায় এবং প্রতিটি বাড়িতে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং আজও আটচালার সাবেকি প্রতিমা পূজিত হয় আর প্রতিটি প্রতিমা “তিন চালির”।
এবার আপনাদের জন্য রইল সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের দূর্গা প্রতিমার ছবি।
আজ থেকে প্রায় ৩০৩ বছর আগে মহারাজা জয় নারায়ণ ঘোষাল বর্তমান খিদিরপুরে অবস্থিত ভূকৈলাস রাজবাড়িতে এই দূর্গাপূজা প্রতিষ্ঠা করেন। এই বাড়ি বিখ্যাত তার জোড়া শিব মন্দিরের জন্য। এটি ১৭৮১ খ্রীষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়, যার মধ্যে একটি ১৫ ফুট ও অন্যটি ১২ ফুট লম্বা। এই পরিবারের দূর্গাপূজার আর একটি বৈশিষ্ট্য হল ভোগ বিতড়ন যা নবমীর দিন প্রতিটি দর্শনার্থীদের দেওয়া হয়।
আসুন দেখে নেওয়া যাক ভূকৈলাস রাজবাড়ির দূর্গাপূজার ছবি।
মা দূর্গা আমাদের কাছে শক্তির এক রূপ যা শুভ শক্তির আধার ও সকল শুভ ইচ্ছা, বাসনার বার্তাবাহক।শুধু বাঙালি নয় সর্ব জাতি-বর্ণ সম্বনয়ের মানুষ এই উৎসবে মেতে ওঠেন। দূর্গাপূজা বাংলার এক আবেগঘন নিদর্শন। বাংলার বাইরে এবং ভারতবর্ষের বাইরেও এই উৎসব পালন করা হয়। যেখানে বাঙালী সেখানেই দূর্গাপূজা। অনেক বিদেশি দূর্গাপূজার সময় বাংলাতে আসেন এই উৎসবে সামিল হতে।এই ঐতিহ্য ও বনেদিয়ানাকে ঘিরে মানুষের অনুভূতি বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে যা উত্তর কলকাতা ও দক্ষিণ কলকাতা বনেদি বাড়ির দূর্গাপূজা তথা আমাদের গর্ব।
আরও পড়ুন – মা তারা ও সিদ্ধপীঠ তারাপীঠ মন্দির: বাঁধা বিঘ্ন ও দুঃখ বিমোচনে তারা মা
আশা করি আপনাদের সকলের এই লেখনী খুব পছন্দ হবে। দূর্গাপূজার কথা মানেই তো আমাদের উৎসবের কথা। জানান তাহলে কেমন লাগল এই প্রয়াস আপনাদের অপেক্ষায় থাকলাম।
ধন্যবাদ।
সকালবেলা আমরা যে উদ্দমের সাথে দিন শুরু করি যে এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আমরা সারাদিন আমাদের…
স্বপ্ন যা আমাদের বাঁচাতে অনুপ্রাণিত করে, স্বপ্ন পূরণ এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যার জন্য লড়াই করতে থাকি…
সকালের ক্লান্ত আভায় ভেসে রাতের অন্ধকারে শান্তি খুঁজে পাই। সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে চাঁদ মামার…
আমরা সকলেই স্মার্ট যুগে নানান গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে গুড মর্নিং বা সুপ্রভাত বা শুভ সকাল…
আমাদের জীবনে চলার পথে নানা বিষয় আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হয় ভালো মন্দ মিশিয়ে। মানুষের ব্রম্ভাস্থ…
বিবাহ খুব পবিত্র শব্দ যা শত যুগ ধরে দুটি মানুষের সারাজীবনের বন্ধন হিসেবে স্থগিত করা…