প্রাচীন অথর্ব বেদে আদার বিভিন্ন ভেষজ গুনের কথা উল্লেখ আছে। আদার উপকারিতা-র কথা মাথায় রেখে সেই বৈদিক যুগ থেকে রোগ নিরাময় করতে ও মানুষকে সুস্থ রাখতে ব্যাপক ভাবে আদার ব্যবহার হয়ে আসছে। পৌরাণিক রাজবৈদ্য ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে আদা কে রোগ নিরাময়ের অন্যতম ওষুধ রূপে স্বীকার করা হয়েছে। আদায় উপস্থিত লবন, ভোলেটাইম অয়েল, পটাসিয়াম ছাড়াও বেশ কিছু খনিজ ও জৈব রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা মানুষের নানান শারীরবৃত্তীয় কর্মপ্রক্রিয়া পরিচালনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
আসুন আজ তাহলে জেনে নেওয়া যাক আদার নানাবিধ উপকারিতা।
ঠান্ডা গরম লেগে অথবা বৃষ্টিতে ভিজে আচমকা জ্বর সর্দি হলে তুলসী পাতা রস, মধু ও আদার রস মিশিয়ে সকাল বিকেল খেলেই জ্বর সেরে ওঠে।এছাড়াও গলায় কফ জমলে ও খুশখুশে কাশি হলে নুন আদার উপশম অনেক উপকারী।ভাইরাল ফিভারের ক্ষেত্রে মধুর সঙ্গে সমপরিমান আদার রস একটু গরম করে মিশিয়ে নিয়ে দিনে কয়েকবার খেলেই ভাইরাল ফিভার ও ঠান্ডা লাগার সমস্যা সেরে যাবে। আদায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।তাই বিভিন্ন কাফ সিরাপে আদার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। জ্বর, সর্দি, অ্যাজমা, গলা ব্যথা ও গলায় ইনফেকশন এর ক্ষেত্রে আদার খুবই উপকারী।
বর্তমান সমাজ ডায়েবেটিস এর প্রকোপ ক্রমশ বেড়েই চলেছে।তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই আপনার হাতের মুঠোয় ই আছে রোগের মোক্ষম দাওয়াই। আদা মধুমেহ তথা ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রণ এ সহায়তা করে। আদার নির্যাস মানব দেহের কোষে গ্লুকোজের শোষন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং কোষ গুলিতে নির্বিঘ্নে ইনসুলিন চলাচল করতে পারে।
আদা হার্টের রোগীদের ক্ষেত্রেও খুবই উপকারী। আদায় ক্রোমিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক নামক পদার্থ বর্তমান যা রক্তে অনুচক্রিকা ও হৃদযন্ত্র সচল রাখতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার নিয়ে প্রতি নিয়তই গবেষণা চলছে সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে আদার মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও জিনজেরোল নামে একটি কম্পাউন্ড থাকে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট দেহের টক্সিন পদার্থ গুলি নির্গত করে দেয়। এতে ক্যান্সারের আশঙ্কা অনেকটা কমে যায়।আদা মূলত কোলন ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে অব্যর্থ উপাদান বলে মনে করা হয়।তাই ভয়ঙ্কর রোগদের থেকে দূরে থাকতে আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত আদার ব্যবহার করতে শুরু করুন।
আদা ব্যাথানাশক হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আদা মাংসপেশীর কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে থাকে।দেহের ভিতর প্রদাহ জনিত সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। অ্যার্থ্রাইটিসের মতো রোগের প্রকোপ কমাতেও এর জুরি মেলা ভার। এছাড়াও ক্রনিক বাতের সমস্যা ও জয়েন্ট পেন থেকে রিলিফ দিয়ে থাকে আদার উপকারিতা। এছাড়াও মাইগ্রেন ও মাথা ধরা, মাথা ব্যথা সারাতে আদা যুক্ত চা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আদায় উপস্থিত অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল অ্যান্টি ফাংগাল, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান ক্ষত স্থান তারাতারি শুকিয়ে দিতে সাহায্য করে।
রান্নার মশলা হিসেবে আদার ব্যবহার প্রায় সকলেই করে থাকি।এই আদার উপকারিতা পাকস্থলীর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। ফলে অজীর্ণ, পেট ফাঁপা নিরাময়ে আদার ভূমিকা অপরিসীম। আদা যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয় তেমনই জটিল আমাশয় রোগের ক্ষেত্রে ও সমান কার্যকরী। যদি প্রতি দিন সকাল ও রাতে ঈষদুষ্ণ জলে আদার গুঁড়ো মিশিয়ে খাওয়া যায় তাহলে এই আমাশয় রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আদা রূপচর্চার ক্ষেত্রে ও খুবই সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। আদায় অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল অ্যান্টি ফাংগাল উপাদান থাকায় ব্রণ ও ত্বককে যাবতীয় সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখে। আদার অ্যান্টি এজিং উপাদান দেহে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না,ত্বকে কুঁচকে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে ও রিংকেল কম করে। এবং ত্বকের রঙ হাল্কা করতে ও ত্বককে মসৃণ করতেও সাহায্য করে।
আদার উপকারিতা চুলের অকাল পক্কতা রোধ করে ও চুলের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে।
আদার রস দাঁতের মাড়িকে শক্ত করে, দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবার পরিষ্কার করতে সহায়তা করেও জীবাণুকে ধ্বংস করে।মুখে দূর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। পায়েরিয়া নিবারণ করে। দাঁতকে সাদা করে।তাই তো আদাকে মুৎসুদ্দি হিসেবে ব্যবহার করে থাকি সেই প্রাচীন কাল থেকে।
আরও পড়ুন – নয়নতারা ফুলের উপকারিতা
তাই বলা চলে, আদা সত্যিই মহৌষধি। দেখলেন তো আদার উপকারিতা কত। এবার থেকে আপনার যেকোন সমস্যায় আদা ব্যবহার কোরে দেখুন সুফল অবশ্যই পাবেন। সমস্যা গভীর হলে দেরী না করে অতি অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যান।
আশা করি আলোচনাটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।কেমন লাগল অবশ্যই জানাতে ভুলবেন না। পরবর্তীতে আরও ভেষজ সম্পর্কিত তথ্য পেতে অতি অবশ্যই আমাদের সঙ্গে থাকুন।ভালো থাকুন এবং সুস্থ থাকুন।
ধন্যবাদ।
সকালবেলা আমরা যে উদ্দমের সাথে দিন শুরু করি যে এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আমরা সারাদিন আমাদের…
স্বপ্ন যা আমাদের বাঁচাতে অনুপ্রাণিত করে, স্বপ্ন পূরণ এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যার জন্য লড়াই করতে থাকি…
সকালের ক্লান্ত আভায় ভেসে রাতের অন্ধকারে শান্তি খুঁজে পাই। সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে চাঁদ মামার…
আমরা সকলেই স্মার্ট যুগে নানান গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে গুড মর্নিং বা সুপ্রভাত বা শুভ সকাল…
আমাদের জীবনে চলার পথে নানা বিষয় আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হয় ভালো মন্দ মিশিয়ে। মানুষের ব্রম্ভাস্থ…
বিবাহ খুব পবিত্র শব্দ যা শত যুগ ধরে দুটি মানুষের সারাজীবনের বন্ধন হিসেবে স্থগিত করা…