তিলোত্তমা কলকাতা নগরীকে আমরা ‘City of joy’ বা ‘প্রাণের শহর’ রুপে জানলেও কলকাতাকে প্রেমের শহর ও বলা যায়। এ শহরের অলিতে গলিতে, আনাচেকানাচে যেন প্রেমের-ই গল্প লুকিয়ে আছে। কলকাতার কিছু প্রেমের জায়গা তিলোত্তমা কলকাতা নগরীকে যেন ‘প্রেমোত্তমা’ শিরোপা দিয়েছে।
রেস্তোরাঁ বা বিলাসবহুল হোটেলে বিনোদন করা তো আছেই। তাছাড়া ও গঙ্গার ঘাটে বসে ঢেউয়ের উথাল পাথাল দেখা , পায়ে হেঁটে উত্তর কলকাতা ঘোরা বা ময়দানে সবুজ ঘাসের উপর হাঁটা।আবার কফি হাউসে চায়ের টেবিলে আড্ডা বা অ্যাকাডেমিতে নাটক দেখা অথবা এসপ্ল্যানেডে একসাথে হাতে হাত রেখে ঘুরে শপিং করা – সমস্ত কিছুর মধ্যেই রয়েছে প্রেম। আর সব মিলিয়ে গোটা কলকাতা তিলোত্তমা জুড়ে যেন প্রেমের বাহার বিরাজমান।
দুজন ভালবাসার মানুষ নারী-পুরুষ একান্তে নিজেদের প্রেমালাপ করতে চাইবেই। দুজন যুগল চায় একটু নিরালায়, নির্জনে একে অপরের সাথে ভালবাসার কথা বলতে। সেক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা হওয়াটাও স্বাভাবিক। কিন্তু জনসমাজ দুজন নারী-পুরুষের ঘনিষ্ঠ হওয়াটাকে আড়চোখে দেখে। তাই যুগলরা প্রেমালাপের জন্য একটু নিরিবিলি, নির্জন জায়গা খোঁজে। যেখানে নিভৃতে নিরালায় যুগলরা একে অপরের কাছে আসতে পারে, একে অপরকে চুম্বন করতে পারে, এমনকি আরও অন্তরঙ্গ হয়ে উঠতে পারে। প্রেমিক-প্রেমিকাদের ভালবাসার উষ্ণ পরশ দিতে, প্রেম সুখভোগের আবেশ মেটাতে কলকাতার কিছু প্রেমের জায়গা অন্যতম।
নিশ্চিন্তে, নিভৃতে ও নির্জনে প্রণয়াবেশে প্রিয় মানুষটির সাথে সময় কাটাতে শহরের বাইরে কোথাও যেতে হবে না, কলকাতায় রয়েছে এমন অনেক প্রেমের জায়গা।
হুগলি নদীর তীরে অসাধারণ একটি প্রেমোনুকুল জায়গা। বাবুঘাট-আউট্রাম ঘাট পার করে চক্ররেলের রেল লাইনের পাশ দিয়ে পায়ে হেঁটে পৌঁছানো যায় প্রিন্সেপ ঘাটে। গঙ্গা নদীর প্রাকৃতিক শোভা উপভোগের সাথে সাথেই চুম্বনের জন্য আদর্শ জায়গা।নৌকায় প্রমোদ ভ্রমণে ও রোমান্টিক মুহূর্ত কাটানো যায় বেশ কিছুটা সময়।
বাবুঘাটের কাছেই গঙ্গা নদীর পূর্ব তীরে সাজানো উদ্যান। গঙ্গার তীরে বসে গঙ্গায় জলের খেলা দেখতে দেখতে, শীতল হাওয়ায় মাতোয়ারা হয়ে, প্রিয় মানুষটির হাতে হাত রেখে প্রেমালাপ, উভয়ের সান্নিধ্যে উষ্ণ আকর্ষণ – প্রেমিক-প্রেমিকাদের আকৃষ্ট করে মিলেনিয়াম পার্ক।
মহারাণি ভিক্টোরিয়ার স্মৃতি সৌধ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল।মেট্রো রেলওয়ে ষ্টেশন ময়দান থেকে ট্যাক্সি বা বাসে পৌঁছে যাওয়া যায় এখানে। মার্বেলের তৈরী এই অসাধারণ স্থাপত্যটি যুগলদের পছন্দের কলকাতার প্রেমের জায়গা গুলোর অন্যতম। চারপাশে সুন্দর সাজানো বাগান, গাছপালা, ফোয়ারা ও ছোটদীঘি যুগলদের প্রেমের উপযুক্ত পরিবেশ।
নলবন পার্ক, নলবন বোটিং কমপ্লেক্স নামে পরিচিত। বিধাননগর বা উল্টোডাঙা থেকে ট্যাক্সি বা বাসে পৌঁছে যাওয়া যায় নলবন পার্কে। গাছগাছালিতে ভরা সামনে বিশাল ঝিলের শোভা প্রেমাকর্ষনে লিপ্ত করে প্রেমিক-প্রেমিকাদের। ঝিলে নানা বিনোদনের ব্যবস্থা ও আছে। প্রেমিক-প্রেমিকাদের প্রেমালাপের অবাধ স্বাধীনতা ও রয়েছে নলবনে।
আরও পড়ুন – মিথ্যা ভালোবাসা চেনার উপায়
সেন্ট্রাল পার্ক বা বনবিতান কলকাতার প্রেমের জায়গা গুলোর মধ্যে বিখ্যাত। সল্টলেক করুণাময়ীর কাছেই এই সেন্ট্রাল পার্ক। প্রেমিক-প্রেমিকাদের ঘনিষ্ঠ ভাবে সময় কাটানোর জন্য অবাধ লাইসেন্স আছে।এখানে নির্জনে, নিভৃতে প্রেমিক-প্রেমিকারা উভয়ের ঘনিষ্ঠতায় শরীরের উষ্ণতার ছোঁয়া পেতে পারে কেউ বাঁধা দেবে না। রোমান্টিকতায় লীন হয়ে যুগলরা নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলে এই সেন্ট্রাল পার্কে।
এলিয়ট পার্ক, কপোত কপোতিদের জন্য প্রেমের নিরাপদ জায়গা। মেট্রো রেলওয়ে ষ্টেশন পার্ক স্ট্রিটের হৃদয় জুড়ে রয়েছে এটি। কোনোরকম টেনশন ছাড়াই রোম্যান্স করার উপযুক্ত জায়গা। এখানে গাছপালা, গাছের কোটরগুলি ও ঝোপঝাড় প্রণয়যুগলীর প্রেম করার জন্যই বিশেষ কাম্য ।
ঢাকুরিয়ার লেক, রবীন্দ্র সরোবর লেক নামে ও অনেকে জানেন ।দক্ষিণ কলকাতার প্রেমের জায়গাগুলোর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য এটি ।কলকাতায় প্রেম করলে যুগলরা এখানে আসবে না হতেই পারে না। ঝিলের জলের মিষ্টি হাওয়ায় শ্যাওলা ধরা আদ্দিকালের বাঁধানো বসার জায়গাতে, সঙ্গীনির শরীর ঘেঁষে বসা। ঝিলের জলে পা নাড়াতে নাড়াতে যুগলদের চুমু খাওয়া, এমনকি ঝোপঝাড়ে লোক চক্ষুর আড়ালে শরীরি উষ্ণতা উপভোগ করার মনোরম পরিবেশ।
কংক্রিটের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে একটু নিরিবিলি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে চলে যাওয়া যায় রাজারহাট-নিউটাউনের বিস্তীর্ণ এলাকার এই বিনোদন পার্কে । বিস্তৃত লেক, বাগান, নিরিবিলি বসার জায়গা, ওয়াটার স্পোর্টস, সবুজের ছোঁয়া আর মিষ্টি হাওয়া প্রেমিক-প্রেমিকাদের আকর্ষণ করে।
পূর্বের সিটিজেন্স পার্ক বর্তমানেমোহর কুঞ্জ । মোহর কুঞ্জ কলকাতার একটি সরকারি শহরাঞ্চালীয় পার্ক। নন্দন ও ভিক্টোরিয়ার পাশেই অবস্থিত এই পার্কটি সচরাচর সবাই জানে না। তবে মনের মানুষটির সাথে নিশ্চিন্তে নিরালায় প্রেম করতে প্রণয়যুগলী চলে আসতে পারে মোহর কুঞ্জে।
কলকাতার অতি বিরল জায়গার মধ্যে নন্দন অন্যতম। মনের মানুষটির সাথে জমিয়ে প্রেম করতে, তার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিতে নন্দনে একবার আসতেই হবে। এছাড়া, উচ্চমানের থিয়েটার সঙ্গে ঘেঁষা ঘেঁষা প্রেম ও গল্প-আড্ডা-গান-চায়ের ভাঁড়ে চুমুক – এমন প্রেমের বাতাবরণ নন্দনে টেনে নিয়ে আসে প্রেমিক-প্রেমিকাদের।
ময়দান বা গড়ের মাঠ কলকাতার একটি বৃহত্তম উদ্যান। প্রচুর গাছপালা ও সবুজ মাঠে সঙ্গীনির হাত ধরে ঘাসের উপর হাঁটা, মাঠে পাশাপাশি উভয়ের গা ঘেঁষে বসার মধ্যে উচ্ছ্বসিত প্রেম ভরিয়ে তোলে যুগলদের।
আরও পড়ুন – বাসর রাতে কি যৌন মিলন আবশ্যক?
মানি স্কোয়ার রুফ টপে, অতো উঁচু থেকে কলকাতা দর্শন এক অতি মনোরম পরিবেশ। মনের মানুষটির সাথে নিশ্চিন্তে নিরালায় দীর্ঘক্ষণ সময় কাটিয়ে নিতে পারেন।প্রেমালাপে ভরিয়ে তুলতে পারেন ভালবাসার মানুষটিকে।
আশ্চর্য কলকাতা! এখানে প্রেমের জন্য কবরস্হান ও হয়ে উঠেছে স্বর্গোদ্যান।
নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ, সবুজ বাগান, গাছপালা – প্রেম পিপাসুদের প্রেম উপভোগের রসদ যোগায়।
এছাড়া ও বাগবাজার ঘাট, ধর্ম তলার ট্রাম স্মরণিকা, প্রেসিডেন্সির লাভার্স লেন,
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত যাদবপুর ঝিল, সল্টলেকের রাস্তা,কফি হাউস – এ সব জায়গাতেই কলেজ পড়ুয়াদের ভিড়, তরুণ-তরুণীদের আড্ডা। গল্প , আড্ডা, বিনোদনের পাশাপাশি হাতে হাত রেখে মিষ্টি মধুর প্রেম উষ্ণতার পরশ নিয়ে ভালবাসার মানুষটির সাথে কাটিয়ে নেওয়া যায় দীর্ঘক্ষণ সময়।
বিভিন্ন তথ্যসূত্র সংগৃহীত ও নিজ অবগত কলকাতার কিছু প্রেমের জায়গা ও সেখানকার প্রেমাস্পদনের পরিবেশের কথা উল্লেখিত হল। আপনারা যারা নিজের মনের মানুষটিকে, স্বীয় ভালোবাসার মানুষটিকে একান্তে নিরালায় প্রেম বিনিময় করতে চান। কোনও ভাবনা নয় নিশ্চিন্তে চলে আসুন আর আপনাদের ভালবাসার মুহূর্ত গুলোকে রঙিন করে প্রেমের রামধনুতে রেঙে উঠুন আর স্বীয় ভালবাসাকে চিরন্তন মাত্রায় পৌঁছে দিন।
সকালবেলা আমরা যে উদ্দমের সাথে দিন শুরু করি যে এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আমরা সারাদিন আমাদের…
স্বপ্ন যা আমাদের বাঁচাতে অনুপ্রাণিত করে, স্বপ্ন পূরণ এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যার জন্য লড়াই করতে থাকি…
সকালের ক্লান্ত আভায় ভেসে রাতের অন্ধকারে শান্তি খুঁজে পাই। সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে চাঁদ মামার…
আমরা সকলেই স্মার্ট যুগে নানান গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে গুড মর্নিং বা সুপ্রভাত বা শুভ সকাল…
আমাদের জীবনে চলার পথে নানা বিষয় আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হয় ভালো মন্দ মিশিয়ে। মানুষের ব্রম্ভাস্থ…
বিবাহ খুব পবিত্র শব্দ যা শত যুগ ধরে দুটি মানুষের সারাজীবনের বন্ধন হিসেবে স্থগিত করা…