বাংলা সাহিত্যের একজন খ্যাতনামা তথা সর্বদিক বিজয়ী ব্যক্তিত্ব হলেন হুমায়ুন আহমেদ।
বাংলাদেশি এই প্রতিভা একাধারে যেমন ছিলেন ছোটোগল্পকার, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, গীতিকার তেমনি তিনি লেখালিখির পাশাপাশি স্বদক্ষতায় করে গেছেন নানা চিত্রনাট্য এবং চলচ্চিত্র পরিচালনার মতো শৈল্পিক কার্যসমূহ। তিনি ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাহিত্য জগতে স্বমহিমায় বিরাজমান হওয়া সত্ত্বেও তাঁর পড়াশোনা ছিল রসায়ন কেন্দ্রীক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিদ্যা নিয়ে চর্চা করেন এবং পরবর্তীতে তিনি নর্থ ডাকোটা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি করেন। তিনি তাঁর নিপুণ সাহিত্য রচনার জন্য সাহিত্য বাংলা একাডেমি থেকে ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান এবং এর পাশাপাশি তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্যিক পুরস্কার একুশে পদক জয় করেন। তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস “নন্দিত নরকে”। হুমায়ূন আহমেদ উক্তি(Humayun Ahmed Quotes) যা কিনা স্বগরিমায় আমাদের লেখালিখির মধ্যে জায়গা করে নেয় আসুন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
হুমায়ূন আহমেদের মতো এই মহান ব্যক্তিত্ব তাঁর সৃষ্টি কর্মের মধ্য দিয়ে সাহিত্য দুনিয়ায় যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তার হদিশ হুমায়ূন আহমেদ উক্তি(Humayun Ahmed Quotes) দিয়ে আমরা খানিকটা আন্দাজ করতেই পারি।
নিম্নে তাঁরই কিছু উক্তি বর্ননা করা হল-
১)”ভালোবাসা ও ঘৃনা দুটোই মানুষের চোখে লেখা থাকে”
হুমায়ুন আহমেদ(ঘেঁটু পুত্র কমলা)
মানুষের চোখ হল আয়নার মতো তাতে শুধু মানুষের মনের চিত্র ফুটে ওঠে। যা কেউ কখনো আজ পর্যন্ত লুকিয়ে রাখতে পারেনি বা মিথ্যা করে দেখতে পারনি। কোনো মানুষের কারো প্রতি যা অনুভূতি আছে তা তার চোখে ফুটে ওঠে সেটা ভালোবাসা হক বা ঘৃনা। মানুষ মুখে যতই মিথ্যা বলুক না কেন নিজের চোখের প্রতিফলনে তা কোনো ভাবেই দেখিয়ে উঠতে সফল হতে পারে না। তাই ভালোবাসা এবং ঘৃনা এই দুই মানুষের চোখে লেখা থাকতে দেখা যায়। শত চেষ্টা হার মানে ভালোবাসাকে ঘৃণা আর ঘৃণাকে ভালোবাসা করে দেখাতে।
২)”কেও কার মতো হতে পারে না। সবাই তার নিজের মতো হয়”
হুমায়ূন আহমেদ(অপেক্ষা)
এই পৃথিবীতে সবার এক একটি নিজস্ব স্বত্তা আছে এবং মানুষ তা নিয়েই জন্মায়। প্রতিটা মানুষ এক রকম কাজ করলেও সেই দুটি কাজের মধ্যে পার্থক্য অবসম্ভবী কারণ দুটি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে তফাত আছে যা মানুষকে একে অন্যের থেকে পৃথক করে তোলে। তাই কখনোই কেউ কারও মতো হতে পারেনা। হুমায়ূন আহমেদ উক্তি (Humayun Ahmed Quotes) এই বার্তাই বহন করে। তিনি যথার্থই তাঁর অপেক্ষা নামক গ্রন্থে এটির বিবরন করেছেন। দুটি মানুষের মুখে সব সমান থাকা সত্ত্বেও যেমন তাদের দেখতে আলাদা হয় ঠিক তেমনি মানুষ একে অন্যের থেকে আলাদা হয় কেউ কারো মতো চাইলেও হতে পারে না। এই জন্যই মানুষ দের আলাদা করে চেনা যায়।
৩)”লাজুক মানুষ বেশিরভাগ সময় মনের কথা বলতে পারে না। মনের কথা হড়বড় করে বলতে পারে শুধুমাত্র পাগলারা। পাগলরা মনে হয় সেই কারনেই সুখী।”
হুমায়ূন আহমেদ(মেঘ বলেছে যাব যাব)
এই পৃথিবীতে যত কোটি মানুষ তত রকমই তাদের বৈচিত্র্য। কিছু যারা শান্ত এবং লাজুক স্বভাবের তারা চট করে কথা বলতে বিশেষ করে নিজের কথা বলতে পারেনা যা অনেক সময় সমস্যার সম্মুখীন করে তোলে তাদের। এই মানুষ সমূহ শুধুমাত্র চাপা ও কে কি ভাববে বা।বলবে সেই চিন্তা করতে থাকে। অপর দিকে যারা হড়বড়।করে নিজের কথা বলে নিজেকে বা নিজের মনকে হালকা করে ফেলে তারা সবার কাছে পাগল বলে চিহ্নিত হলেও প্রকৃত অর্থে সুখী হয়। তাই লাজুক স্বভাবের মানুষের মনের মধ্যে সুখের পরিমাণ কম।
৪)”বয়স কালেই মানুষ ছোটছোট ভুল করতে থাকে। ছোটো খাটো ভুল করা যখন অভ্যাস হয়ে যায় তখন করে বড়ো ভুল”
হুমায়ূন আহমেদ(জোছনা ও জননীর গল্প)
মানুষ মাত্রই ভুল করে তা আমারা সবাই জানি। এই মানুষই যখন এটিকে মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে নেয় যে ভুল তো হবেই তখন মানুষ তা শুধরাতে ভুলে যায়। সব ভুল তার কাছে “ভুল হতেই পারে” বলে মনে হয়। তখন মানুষের মধ্যে তা অজান্তেই তার অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায় এবং জন্ম নেয় ভুলের। যাতখন চাইলেও শুধরানোর কোনো উপায় তার জানা থাকে না। এই থেকে পরবর্তীকালে মানুষের ভুলের পরিমাণ বেড়ে ওঠে।
৫)”পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ সম্ভবত কষ্ট পাবার জন্যই জন্মায়। টাকা পয়সার কষ্ট নয়, মানসিক কষ্ট।”
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ উক্তি(Humayun Ahmed Quotes) যথার্থ এই কারণে বলা চলে কারণ, মানুষ যখন শারীরিক কষ্ট পায় তা দৃশ্যমান তাই উপশম সম্ভব কিন্তু যা দৃশ্যমান নয় তা কিভাবে উপশম সম্ভব? তার ওপর মানুষটি যদি সবার থেকে উপেক্ষিত হয় তাকে বোঝার কেউ না থাকে, তারপর সেই মানুষটির বলার ইচ্ছা টুকুও অবশিষ্ট থাকে না সারা জীবন এই যন্ত্রণা নিয়ে বাঁচাতে হয় তাকে।
৬)”কিছু কিছু মানুষ ভাগ্যকে নিজের হাতে গড়ে। আবার কারো কারো কাছে ভাগ্য আপনি এসে ধরা দেয়।”
হুমায়ূন আহমেদ
কথায় আছে মানুষ নিজের ভাগ্য নিজে গড়ে এটাও যেমন ঠিক তেমনি কিছু মানুষ ভাগ্য নিয়ে জন্ম গ্রহন করে এটাও ঠিক। মানুষের ভাগ্য সহায় থাকলে সব তার পক্ষে থাকে। পরিশ্রম ও ভাগ্য তাকে সফলতার শিখড়ে টেনে তোলে। যাদের ভাগ্য প্রথমে সহায় হয় না তারা পরিশ্রম আর নিষ্ঠা দিয়ে তা তাদের সহায় করে নেয়।
৭)”সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে কেউ মিথ্যা বলতে পারে না। মিথ্যা বলতে হয় অন্য দিকে তাকিয়ে।”
হুমায়ূন আহমেদ
চোখ যেহেতু মানুষের মনের প্রতিচ্ছবি তাই মিথ্যা বলার সময় তা চোখে ধরা পরে যায়। মিথ্যা বলতে বা কিছু লুকাতে আগে চোখ লুকানো আবশ্যক। তা না হলে মানুষ ধরা পরে যায়। মিথ্যা অনেক সময় ভালো কাজের জন্য আমরা বলে থাকি সেক্ষেত্রে এটি মনে রাখতে হবে আমাদের।
৮)”প্রতিটি দুঃসংবাদের সাথে একটি করে সুসংবাদ থাকে।”(বাদশাহ নামদার)
হুমায়ূন আহমেদ
পৃথিবীতে ভালো খারাপ দুই আছে। ভালো আছে বলে আমারা খারাপকে এবং খারাপ আছে বলে আমারা ভালোকে অনুধাবন করতে পারি। তাই, ভালো খারাপ পাশাপাশি চলে। একটি অন্যটি ছাড়া অসম্পূর্ন। তাই সংবাদ এলেও খারাপ এর সাথে ভালো থাকবে কারণ, এই পৃথিবীতে সব ভারসাম্য বজায় রেখে হয় তাই এর কোনো অন্যথা হবে না।
৯)”একজন মানুষকে সত্যি করের জানার উপায় হল তার স্বপ্নটাকে জানা।”
হুমায়ূন আহমেদ(কবি)
স্বপ্ন-যা মানুষকে বাঁচাতে উৎসাহ দেয়। হাজার “না”।পাওয়ার মাঝে মানুষ তার স্বপ্নকে ঘিরে বাঁচে। তাই কোনো মানুষকে প্রকৃত অর্থে জানার অন্যতম উপায় হল তার স্বপ্নটিকে জানা, যেখানে সে নিজে বাঁচে।
১০)”সমূদ্রের জীবনে জোয়ার ভাটা আছে। মানুষের জীবনেও আছে। মানুষের সাথে সমূদ্রের এই জায়গাতেই মিল।”
হুমায়ূন আহমেদ
আমারা জানি সমূদ্রের প্রতি নিয়ত জোয়ার ভাটা হয়। একটু আপাত দৃষ্টিতে দেখলে তা মানুষের জীবনেও বিরাজমান। ভালো সময়,।খারাপ সময় যা জোয়ার ভাটার সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই সমূদ্রের মতো বিস্তর জীবনেও মানুষের সমূদ্রের মতো জোয়ার ভাটার নিয়ম মতো হতে দেখা যায়। কখনও ভালো সময় যা জোয়ার আর কখনো খারাপ যা ভাটার প্রতিরূপ।
আরও পড়ুন – জীবন নিয়ে উক্তি(Quotes About Life): সফল জীবনের চাবিকাঠি
মানুষের জীবন সংক্রান্ত সর্বদিক এই খানে স্থান পেয়েছে। তাই, এই উক্তি গুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণও বটে।
হুমায়ূন আহমেদ উক্তি(Humayun Ahmed Quotes) যা কিনা জীবনের বিভিন্ন স্তর বিভিন্ন সময়ের স্বাক্ষর বহন করে তা আজ বর্ননার মাধ্যমে এটির সংশ্লিষ্ট অর্থ তুলে ধরার চেষ্টা করা হল।
উৎস-ইন্টারনেট
বক্তব্যটি কেমন লাগলো জানান। ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করুন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং আমাদের পাশে থাকুন।
ধন্যবাদ।।
সকালবেলা আমরা যে উদ্দমের সাথে দিন শুরু করি যে এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আমরা সারাদিন আমাদের…
স্বপ্ন যা আমাদের বাঁচাতে অনুপ্রাণিত করে, স্বপ্ন পূরণ এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যার জন্য লড়াই করতে থাকি…
সকালের ক্লান্ত আভায় ভেসে রাতের অন্ধকারে শান্তি খুঁজে পাই। সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে চাঁদ মামার…
আমরা সকলেই স্মার্ট যুগে নানান গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে গুড মর্নিং বা সুপ্রভাত বা শুভ সকাল…
আমাদের জীবনে চলার পথে নানা বিষয় আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হয় ভালো মন্দ মিশিয়ে। মানুষের ব্রম্ভাস্থ…
বিবাহ খুব পবিত্র শব্দ যা শত যুগ ধরে দুটি মানুষের সারাজীবনের বন্ধন হিসেবে স্থগিত করা…