You are here
Home > Don't Miss > বিনোদন > আর কিছুদিনের মধ্যেই আসতে চলেছে অরিজিৎ এর ছায়াছবি (অরিজিৎ ভক্তরা কোথায়)

আর কিছুদিনের মধ্যেই আসতে চলেছে অরিজিৎ এর ছায়াছবি (অরিজিৎ ভক্তরা কোথায়)

অরিজিৎ Arijit

আমরা যারা সঙ্গীতপ্রেমী মানুষ আছি আমাদের কাছে অরিজিৎ সিং নামটাই শিহরণ জাগায়। সঙ্গীতজগতে বিপ্লবের সৃষ্টিকর্তা এই নামটা।
অরিজিৎ এর ভক্তদের মনে এই বিশ্বাস জন্মেছে অরিজিৎ যে গান গাইবে সেই গানই হিট হবে। তবে বিশ্বাসটা মোটেও উড়িয়ে দেবার মতো নয়, মার্ডার ২ আর রাবতার পর থেকে সেদিনের সেই গ্ৰামের ছেলেটার প্লেকব্যাক করার যাত্রা শুরু হয়েছিল, একদিনের জন্যও সে যাত্রা থেমে যায়নি। বরং দ্রুততার সাথে একের পর এক চরম সাফল্যের পর তার মুকুটে নতুন জয়ের পালক গাঁথা হয়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই আসতে চলেছে অরিজিৎ এর ছায়াছবি ।

পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ( অরিজিৎ এর ছায়াছবি ):-

সেই অরিজিৎ এখন পরিচালকের ভূমিকায় “ভালোবাসার রোজ নামচা” নামে একটি ছবি বাণিজ্যিক ছবি আমাদের সামনে হাজির করতে চলেছেন কিছুদিনের মধ্যেই। তবে ছবির গল্প,বা ছবিতে কারা কারা রয়েছেন, কিংবা কে কে প্লেব্যাক করেছেন এই সকল কিছু জানার জন্য আমাদের একটু অপেক্ষা তো করতেই হবে। তবে সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে অরিজিৎ জানিয়েছেন তার “ভালোবাসার রোজ নামচা” কে নিয়ে তার ব্যাপক উন্মাদনার কথা।এর থেকে বোঝাই যাচ্ছে আমাদের সামনে এবার সফল পরিচালক অরিজিৎ সিং কে আমরা সকলে দেখতে চলেছি।

ছেলেবেলা :-

তবে জীবনের উত্থান পতনের কাহিনী অরিজিৎ এর জীবনের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।সুদূর মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জ গ্ৰামের সেদিনের সেই ছোট্ট ছেলেটা দেশ থেকে দেশান্তরের মানুষের অন্তরের নয়নের মনি হওয়ার পিছনের যাত্রাটা অতোটাও কিন্তু সুগম ছিল না। ১৯৮৭ সালের ২৫ এপ্রিল এই মেলোডি কিং এর জন্মদিন। ছোটো থেকেই সঙ্গীত নিয়ে কিছু করার স্বপ্নজাল নিভৃতে বুনেছিল সে।

জন্মসূত্রে পাঞ্জাবি পরিবারে জন্ম হলেও বাঙালিয়ানায় ভরপুর গ্ৰামের এই বঙ্গসন্তান। বাবা পাঞ্জাবি আর মা বাঙালি। মায়ের থেকেই অরিজিৎ সিং এর প্রথম সঙ্গীত রেওয়াজের হাতে খড়ি।। মাতৃকুলের প্রায় সকলেই সম্পুর্ণ ভাবে ছিল সঙ্গীত – সংস্কৃতি মনোভাবাম্পন্ন। অরিজিৎ এর দিদা ছোটোবেলা থেকেই ভারতীয় ক্লাসিক্যালের শিক্ষা নাতি অরির মধ্যে একটু করে বপন করেছিলেন।মামা তবলাবাদক ছিলেন।তবলা বাজানোর হাতেখড়ি মামার কাছ থেকে। এছাড়াও অরিজিৎ এর মাসি আর মা সুখ্যাত গায়িকা ছিলেন।তাই ছোটো থেকেই সঙ্গীতচর্চার সুনিপুণ পরিবেশে সে বেড়ে উঠেছিল।১০ বছর বয়সে রাজ্য সরকারের থেকে গানের জন্য স্কলারশিপ পেয়েছিলেন।


পড়াশুনা :-

গানভোলা ছেলে গানের পাশাপাশি পড়াশোনাকেও বেশ কিছুটা দূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছিলেন। রাজা বিজয় সিং হাই স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার পর, শ্রীপদ সিং কলেজ থেকে পড়াশুনা সম্পূর্ণ করেছিলেন। আর তখন থেকেই সঙ্গীতই নেশা, সঙ্গীতই পেশা এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিলেন।


শিক্ষাগুরু :-

রাজেন্দ্র প্রসাদ হাজারীর কাছ থেকে ভারতীয় ক্লাসিক্যাল দক্ষতার সহিত শিখেছিলেন। এরপর ধীরেন্দ্র প্রসাদ হাজারীর কাছে তবলা বাজানোর বলিষ্ঠ জ্ঞান নিজের ঝুলিতে সংরক্ষিত করেছিলেন।এরপর বীরেন্দ্র প্রসাদ হাজারীর থেকে আধুনিক ও পপ সঙ্গীতের শিক্ষা লাভ করেছিলেন।

হেরেও জিতে যাওয়া :-

সঙ্গীতের সমস্ত রকম শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া ছেলেটার সঙ্গীতের একটা প্ল্যাটফর্ম ভীষণ ভাবে জরুরি ছিল। প্ল্যাটফর্ম পাবার আনন্দ যেমন ছিল ঠিক তেমনি তীরে এসে তরী ডুবে যাওয়ার দুঃখে দুঃখীত হয়েছিল সেই অরিজিৎ।সালটা ছিল ২০০৫ মুম্বাইয়ে হওয়া”Fame Gurukul”নামের একটি রিয়ালিটি শো তে সকল বিচারক ও দর্শকদের পছন্দের সেরার তালিকায় থাকা সত্ত্বেও ছয় নং স্থান থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল প্রথম স্থান অধিকার না করেই। তবে বিচারকের আসনে থাকা বিশিষ্ট সঙ্গীত পরিচালক শঙ্কর মহাদেবানের চোখে পড়েছিল অরিজিৎ। অরিজিৎ কে তিনি বলেছিলেন অপেক্ষা করতে, এবং অরিজিৎ এর সাথে তিনি আছেন। তিনি অরিজিৎ কে দিয়ে “হাই স্কুল মিউজিক্যাল ২ ” নামের একটি গানের অ্যালবামে গান গাইয়েছিলেন।

আরও পড়ুন – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেরা ১৩ টি উক্তি | Top 10 Quotes Of Rabindranath Tagore

শ্লোকপিডিয়া


কৃতিত্ব :-

এরপর “দশ কে দশ লে গ্যায়া দিল” নামের আরেকটি রিয়ালিটি শো তে অরিজিৎ প্রথম স্থান অলংকৃত করেছিলেন। এইদিনের পর থেকেই অরিজিৎকে আর একদিনের জন্যও পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।একের পর এক গানের চুক্তি আসে।আর আশ্চর্য রকম ভাবে সমস্ত গান হিট। প্রীতম চক্রবর্তী, বিশাল শেখর প্রমুখ সঙ্গীত পরিচালকদের সাহচর্যে উন্নত থেকে উন্নততর গায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশে এনারাই বড়ো ভূমিকা পালন করেছিলেন।


গানের কিছু তালিকা:-

বিভিন্ন রকমের গান অরিজিৎ গেয়েছেন। সেগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য “Tum hi ho”, “Hai Dil yeh mera, Muskurane,Hamari adhuri kahani”,”Kabhi jo badal” ইত্যাদি।
হিন্দী গানের পাশাপাশি বাংলা গানেও সমৃদ্ধশালী হয়েছেন। বাংলা গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য “শুধু তোমারই জন্যে”,”বোঝেনা সে বোঝেনা”,”দেখো আলোয় আলোয় আকাশ”,”কিছু কিছু কথা” ইত্যাদি।
এছাড়াও অরিজিৎ প্লেব্যাক ছাড়া সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন শেষ বয়সে তিনি সঙ্গীত পরিচালনাতে সম্পূর্ণ ভাবে মন দেবেন।
এছাড়াও অরিজিৎ বিখ্যাত রিয়ালিটি শো “দাদাগিরির”টাইটেল সং গেয়েছেন। তাছাড়া কয়েকটি সিরিয়ালের টাইটেল সং গেয়ে তুমুল সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। “তোমায় আমায় মিলে” সিরিয়ালটির টাইটেল ট্র্যাকের জনপ্রিয়তা আজও ম্লান হয়নি। এবার অরিজিৎ এর ছায়াছবি কারবে আমাদের মন।

বৈবাহিক জীবন :-

অরিজিৎ এর এই লম্বা স্ট্রাগলের কাহিনীতে একজন সাথী হয়ে পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। “Fame Gurukuler” মঞ্চেই রূপরেখা ব্যানার্জির সাথে আলাপ।সেখান থেকেই বন্ধুত্ব, প্রেম ও পরে বিয়ে।
তবে সব বিয়েই যে সুদূর প্রসারী হবে এমন কোনো কথা নেই। অবশেষে বিয়ের দুই বছরের মধ্যে সম্পর্কের ভাঙন শুরু হলো।দুজনেই ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিলেন। পরে ২০১৪ তে ছোটোবেলার বান্ধবী কোয়েল রায়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন অরিজিৎ। কোয়েলের অবশ্য আগে অন্যত্র বিয়ে হয়েছিল সেই ঘরে একটি মিষ্টি মেয়ে রয়েছে, তাঁরও সেই বৈবাহিক সম্পর্কটি টেকেনি, আগের স্বামীর ঘরে। তবে অরিজিৎ এর সাথে কোয়েলের আগের সন্তানের দুষ্টু মিষ্টি একটি সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে।

ভার্সেটাইল কিং যে কিনা কঠিন গানকে অতি সহজ করে গাইবার গায়কি ভগবানের উপহারের সমান,সে “হামারি আধুরি কাহানি” এই হিন্দি ছবির টাইটেল ট্র্যাক গাইতে প্রথমে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন। অবশেষে প্রযোজক মহেশ ভাট ও পরিচালক মোহিত সূরীর অনুরোধে এই গানটি গেয়ে চারপাশে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন।এই গানটি রেকর্ড করতে অরিজিৎ এর টানা দুই ঘণ্টা সময় লেগেছিল।


পছন্দের গায়ক :-

অরিজিৎ এর প্রিয় গায়কদের তালিকা কিন্তু বেশ বড়ো।কিশোর কুমার, জগজিৎ সিং,গুলাম আলি,কে.কে.প্রমুখ। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে অরিজিৎ সিং এর ফ্যান ফলোয়ার সবচাইতে বেশি। আবাল বৃদ্ধ বনিতা অরিজিৎ এর গায়কির জন্য পাগল। অরিজিৎ একটি গানের স্কুল খুব শিগগিরই খুলবে। আমাদের সকলের তরফ থেকে আগাম শুভেচ্ছা সেই স্কুলের জন্য।
এতো ভালো গায়কের পুরস্কারের ঝুলি বেশ ভারী।২০১৪ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি ছবি “আশিকি ২ এর Tum hi ho” গানটি ও ২০১৬ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি ছবি “রয় ছবির Suraj duba hain” গান দুটির জন্য “Film fare awards” এ সেরা “Play back Singer” হিসেবে সেরার সেরা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।


সমাজসেবা :-

অরিজিৎ সিং এর নিজস্ব একটি NGO রয়েছে।যার নাম “Let there be Light”.মুশির্দাবাদের জিয়াগঞ্জের পিছিয়ে পড়া ও অনুন্নত মানুষ জনের সেবা করাই এই NGO র প্রধান লক্ষ্য। অসহায়কে সহায়,আর্ত পীড়িত মানুষের কাছে ভগবানের দূত। অরিজিৎ মূলত ভীষণ দয়ালু মনের একজন মানুষ।যার কাছে মূল্যবোধের পাশাপাশি নৈতিকতার বাতাবরণের মিশেলে পুষ্ট সফল শিল্পী। বর্তমানে অরিজিৎ সিং মুম্বাইয়ের বাসিন্দা তথাপি এতো বড়ো উচ্চতায় উঠেও যে নিজের গ্ৰামকে ভোলেনি এই চিন্তনটি অবশ্যই মহত্ত্বের পরিচয় বহন করে।

চড়াই উতরাই এর জীবনে আসল নায়ক তুমি অরিজিৎ।জীবনের পথ তো আর মসৃন নয়,সেই দুর্গম পথ বেয়ে আজ তুমি সাফল্যের চরম শিখরে উন্নীত হয়েছো। মানুষ হিসেবে এমোনি থেকো। আর তোমার সামনের বাণিজ্যিক শর্ট ফিল্মের জন্য আমাদের তরফ থেকে অনেক অনেক শুভকামনা রইলো। অরিজিৎ এর ছায়াছবি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত থাকলাম।আর আমরা নিশ্চিত, গানের সাফল্যের মতোই ছবির পরিচালক হিসেবে অরিজিৎ আবার প্রশংসার ছাপ ফেলে যাবেই যাবে মানুষের অন্তরে।

Leave a Reply

Top
error: Content is protected !!